ঢাকা: দেশের প্রচলিত হিন্দু আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ। হিন্দু আইন সংস্কারের নামে হিন্দু ধর্মীয় তথা শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান সম্বলিত ‘পার্সোনাল ল’ পরিবর্তন বা সংস্কার করার চক্রান্তের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে এ কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠনের জোট সম্মিলিত সনাতন পরিষদ।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেসব সমস্যার সমাধান না করে সরকার ও একটি মহল হিন্দু আইন পরিবর্তন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। শাস্ত্রীয় বিধানের জন্য সম্প্রীতিপূর্ণ পারিবারিক বন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায় শান্তিতে ঘর-সংসার করে আসছে। তাই প্রচলিত হিন্দু আইন পরিবর্তন করে এ সংক্রান্ত নতুন আইনের কোনো প্রয়োজন নেই।
এর আগে, গত ৩ সেপ্টেম্বর ডিআরইউতে এক আলোচনা সভায় সনাতন সম্প্রদায়ের আরেকটি অংশ বাংলাদেশ হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের নেতারা দাবি করেন, দেশের প্রচলিত হিন্দু আইনে নারীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। ছেলেরা বাবার সম্পত্তি পেলেও মেয়েরা পায় না।
সম্পত্তিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের নিরঙ্কুশ উত্তরাধিকার না থাকা, সন্তানের অভিভাবকত্ব ও অধিকার না থাকা, শত নির্যাতনেও বিচ্ছেদের বিধান না থাকার মতো বৈষম্য দূর করতে দেশে প্রচলিত হিন্দু আইনগুলো সংস্কার বলে তারা দাবি করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথও হিন্দু আইন সংস্কারের পক্ষে মত দেন।
প্রতিমন্ত্রী ও বিচারপতি সেদিন যে বক্তব্য দেন, তা প্রত্যাহারের দাবি এবং এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলন থেকে। হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকেও বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সনাতন পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শ্যামল কুমার রায় বলেন, প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (পার্সোনাল ল) বর্তমান পরিবেশ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা হলে হিন্দু নারী ও হিন্দু সম্পত্তি উভয়ের বিপদাপন্নতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। তারপরেও যদি সরকার ও সুবিধাভোগী মহলটি অতি উৎসাহী হয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তনে অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত না হয় তাহলে তারা যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী জে কে পাল, আইনজীবী প্রবীর হালদার, আইনজীবী চৈতালী চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলাশ কান্তি দে প্রমুখ।