মাহমুদুর রহমান(তুরান),ভাঙ্গা(ফরিদপুর) প্রতিনিধি ঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কৃষকদের মাঝে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) চাষ। কষ্টসহিঞ্চু ,অধিক ফলন,পানি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় বেঁচে থাকা সহ নানা সুবিধায় এ জাতের পাট এলাকার কৃষকদের নিকট পছন্দের হওয়ায় তারা এ জাতের পাট চাষে ঝুকে পড়ছেন।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের অধীন উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ হাজার,৮,শ ২০ জন কৃষককে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। এ জাতের পাট আবাদে উদ্বুদ্ব করতে ১,শ ৫০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ,বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে এ জাতের পাটের ২০টি প্রদর্শণী। উপজেলা পাট উন্নয়ন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষনিক তদারকি,পরামর্শ দিয়েছেন । এলাকার কৃষকরা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জমিতে এ জাতের পাট আবাদ করেছেন। জানা গেছে, উন্নততর আঁশ বিশিষ্ট এ পাট অধিকতর উজ্জ্বল এবং শক্ত। এ পাটের আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে আগাম বীজ বপন ও ক্ষেত থেকে কাটাসহ এ জাতীয় পাটের জীবনকাল মাত্র ১১৫ থেকে ১২০ দিন। এ কারণে এ পাট চাষে ইতিমধ্যে উপজেলার কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এ জাতের পাট দেখতে লাল বর্ণের, আঁশ মোটা ও ফলন ভালো হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।
ভাঙ্গা উপজেলা পাট অধিদপ্তর এ পাট চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুুদ্ধ করাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ,কৃষকদের মাঝে প্রশিক্ষণ প্রদান, বীজ সরবরাহ ,তদারকি সহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে । পাট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার কৃষকরা এ বছর ব্যাপকভাবে বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) এর চাষ শুরু করেছেন। এ পাট গাছ সাধারণ জেআরও(ইন্ডিয়ান সাদা)পাট গাছ থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির এবং কিছুটা লম্বা হয়। এ উপজেলায় এ বছর প্রচলিত জেআরও(ইন্ডিয়ান সাদা) পাটের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমান জমিতে বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) চাষ হয়েছে। আগামীতে এ চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছে পাট অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগ। এ পাট চাষ জনপ্রিয় করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে পাট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ জাতের পাট বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এটি অপেক্ষাকৃত উঁচু, জলাবদ্ধতাহীন দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষের উপযোগী। স্বাভাবিক গড় উচ্চতা প্রচলিত জাত অপেক্ষা ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার বেশি। উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,মাঠের বিস্তির্ন এলাকা নয়নাভিরাম লাল রংয়ের পাটে ভরে উঠেছে। অন্যান্য পাটের তুলনায় লম্বা ও পাতার রং সবুজ।
এ ব্যাপারে উপজেলার জঙ্গলকান্দা গ্রামের কৃষক শহিদুর আবু মিয়া জানান, তিনি এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে এ জাতের পাট চাষ করছেন। তিনি উপজেলা পাট অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা বীজ থেকে পাট আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন। তিনি জানান, সাধারণ জাতের যে পাট চাষ করি তার তুলনায় এ পাট কিছুটা লম্বা ও আঁশ মোটা হয়। পাটের রংও বেশ ভালো হয়। সব মিলিয়ে এ পাট চাষে বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি বেশ খুশি। খরচ বাদ দিলে তিনি লাভের মুখ দেখেছেন। উপজেলার সাউতিকান্দা গ্রামের কৃষক টিক্কা শেখ জানান,তিনি দেড় বিঘা জমিতে দেশীয় প্রজাতির লাল পাটের আবাদ করেছেন। বাম্পার ফলন হওয়ায় তারও যথেষ্ট লাভ হয়েছে।
একই গ্রামের এরশাদ শেখ জানান,তারা এ জাতের পাটের আবাদ করে আশানুরুপ বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এতে তিনিও বেশ খুশি। ভাঙ্গা উপজেলা পাট অধিপ্তর কর্মকর্তা উজ্জ্বল বিশ^াস জানান, অন্য জাতের তুলনায় এ জাতটি কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষকদের মাঝে দেশীয় এ জাতের পাট আবাদ বৃদ্বির লক্ষে এলাকায় বীজ উৎপাদনের জন্য ব্্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। উৎপাদিত বীজ এলাকার কৃষকরা বুনে সফলতা পেয়েছেন। তিনি জানান, দেশীয় ্উৎপাদিত বীজ কৃষকদের প্রশিক্ষন, স্থানীয়ভাবে বীজ সরবারাহ,পরামর্শ প্রদান সহ ,সার সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত বীজ পেলে আগামীতে আরও অনেক বেশি আবাদ হবে।
বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) জাতের পাট কেটে পানিতে দেয়ার পর সল্প সময়ে জাগ আসে। ফলে কৃষকরা সহজেই আঁশ সংগ্রহ করে শুকিয়ে তা ঘরে তুলতে পারে। স্থানীয় কৃষকরা নিজেরাই এ জাতের পাট বীজ উৎপাদন করে তা কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এ পাটের গুণাগুণ ও ফলন দেখে দিন দিন কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ মৌসুমে উপজেলায় এ জাতের পাট চাষের যে লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়েছে। কর্মকর্তাদের তদারকি আর পরামর্শের্ এ জাতের পাট চাষ কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হচ্ছে। এই পাটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আগাম চাষ করা যায়, রোগ ব্যাধী কম হয় এবং একটু দেরিতে কর্তন করলেও এ জাতের পাট শুকিয়ে মারা যায় না। আমরা মনে করি আগামীতে বিজেআরআই তোষা পাট-৮(রবি-১) জাতের বীজের সহজ লভ্যতার পাশাপাশি এ জাতের পাটের চাষ আরও বাড়বে।