এক-একজন করে ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আর রাজনীতিবিদরা তা উপেক্ষা করে চলেছেন। বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দি ইকোনমিস্টে ‘ফ্রিডম অব স্পিচ ইন বাংলাদেশ, দ্য থার্ড ক্যাজুয়ালিটি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে গতকাল এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এ বছর কুপিয়ে হত্যার শিকার হওয়া তৃতীয় অনলাইন লেখক অনন্ত বিজয় দাশ (৩২)। তার আগে হত্যার শিকার দুজনের মতো তিনিও ছিলেন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ব্লগার। এ অর্থে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ যে, তার লেখায় তিনি এটা স্পষ্ট করেছেন তিনি রাজনীতি প্রভাবিত ধর্মের পক্ষে ছিলেন না। কয়েক মাসে রাজপথে আরও অনেক বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এদের কেউ কেউ রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার। কিন্তু এ তিন ব্লগারের মৃত্যুতে উদ্বেগজনক এক রীতি সামনে এসেছে যা রাজনৈতিক দিগন্তে আরও বড় ধরনের অন্ধকারের প্রতিফলন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
নিহত তিন ব্লগারই ছিলেন বিজ্ঞান উৎসাহী, বইয়ের পোকা আর শিক্ষিত। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিকে চ্যালেঞ্জ করে মতামত দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। এতে তারা অনেকের বিরাগভাজন হয়েছেন। প্রথম হত্যার শিকার হন অভিজিৎ রায়। রাজধানীর গ্রন্থমেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাজপথে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। আমেরিকায় স্থানান্তর হয়ে সেখানেই থিতু হয়েছিলেন তিনি। ‘ভাইরাস অভ ফেইথ’ শিরোনামে তার লেখা একটি বইয়ের প্রচারণা করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। নিহত ২য় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান (২৭)। ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসগুলোতে তিনি ইসলামের রক্ষণশীল ব্যাখ্যা নিয়ে উপহাসমূলক ঠাট্টা করেন। তাকে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া যুবকদের কট্টর ইসলামপন্থি হিসেবে শনাক্ত করা হয় দ্রুতই। অনন্ত বিজয় দাশ সম্ভবত এ দুজনের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম উসকানিদায়ক ছিলেন। ‘যুক্তি’ নামের একটি ত্রৈমাসিক সম্পাদনা করতেন তিনি। আর অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন। ব্লগটিতে বিজ্ঞান আর সামাজিক সমালোচনামূলক বিষয়বস্তু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লিখেছেন তিনি। তার শেষ ব্লগপোস্টটি অনলাইনে আসে ১২ই মে। তখন তিনি সিলেটে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কয়েক মিনিট বাদেই মুখোশধারী চার হামলাকারী খোলা চাপাতি নিয়ে তার ওপর চড়াও হয়। ঘটনাস্থল ছিল তার বাসা থেকে ২০০ মিটারেরও কম দূরত্বে। সর্বশেষ লেখায় তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোকে রক্ষণশীল সিলেটে প্রচলিত বিচ্ছিন্নবাদীমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘সঙ্কীর্ণ মানসিকতার দেয়ালের মধ্যে কারোরই নিজেদের সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। তাদের জন্য সময় এসেছে কুপের গভীর থেকে উঠে আসার। সময় এসেছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে দেখার। আমরা সবাই মানুষ আর আমরা সবাই বাংলাদেশী বাঙালি।’
নিহত হবার আগে এ সপ্তাহে সুইডিশ দূতাবাস তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তিনি সুইডেনে স্বল্প সময়েরর সফরের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দূতাবাস কর্মকর্তারা সন্দেহ পোষণ করেন, সেখানে পৌঁছালে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য পর্যাপ্ত কারণ পাবেন তিনি।
গত দুবছরে বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামপন্থিদের কাছ থেকে আসা কঠিন সব চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি দেশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য লড়াই করেছেন। আংশিকভাবে আরব দেশগুলোর অর্থায়নে স্থাপিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান, স্কুল আর মসজিদের বিরাট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসলামপন্থি এসব গ্রুপের কয়েকটিকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে। এমন একটি গ্রুপের নাম হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালে এক প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে তারা পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হতে সাহায্য করেছিলেন অনন্ত বিজয় দাশ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ইসলামপন্থি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন। ঢাকার কেন্দ্রে প্রতিবাদকারীদের ঢল নামে। ওই কর্মসূচি শাহবাগ আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। সে সময় শেখ হাসিনার নামেমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে তাদের নিজস্ব লক্ষ্য পূরণে ওই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত হতে আগ্রহী দেখা যায়। আর তাই যথারীতি বিরোধী দল ইসলামপন্থিদের অবশ্যম্ভাবী পাল্টা প্রতিবাদের পেছনে অবস্থান নেয়। ইসলামপন্থিদের ওই প্রতিবাদে সরকার পতনের চেষ্টায় এবং সারা বাংলাদেশ জুড়ে ১৩ দফা শরিয়াভিত্তিক কঠোর শাসন জারি করার লক্ষ্যে দেশের হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্রকে দাবার বড়ে হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে। তাদের পাল্টা প্রতিবাদের অগ্রযাত্রা এতো বড় আর উদ্বেগজনক ছিল যে সরকার হেফাজত নেতৃত্বকে কিনে ফেলার চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তারা ২০১৩’র মে মাসে সহিংসভাবে একটি প্রতিবাদ দমন করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু ইসলামপন্থি আর সরকারের মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র বা অন্য উদ্দেশ্যে গোপন চুক্তি বা সহযোগিতার’ ধারণাটি ছিল অনন্ত বিজয় দাশের মতো নাগরিকদের সব থেকে অস্বস্তির কারণ। সরকারকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে তা লক্ষ্য করে শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ তা স্বীকারও করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি লক্ষ্য করেন, আজকাল সরকারের প্রত্যেকে ‘নাস্তিকের’ তকমা গায়ে লাগা এড়াতে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবেন। তার নিজের মায়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি অনেক বেশি ব্যস্ত যে কারণে কুপিয়ে হত্যার শিকার হওয়া ব্লগারদের দিকে তত বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই আসলে সত্যি হতে পারে। বাংলাদেশের নেতাদের যে কোন কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার অব্যাহত আর মরিয়া চেষ্টা এক ধরনের মনোযোগ বিচ্যুতির সৃষ্টি করেছে যা বিবেচনাহীনতার শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যকার যুদ্ধের প্রথম বলি হিসেবে যদি এ তিন ব্লগারকে ধরা হয় তাহলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বলি খুব বেশি দূরে নয়।
নিহত হবার আগে এ সপ্তাহে সুইডিশ দূতাবাস তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তিনি সুইডেনে স্বল্প সময়েরর সফরের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দূতাবাস কর্মকর্তারা সন্দেহ পোষণ করেন, সেখানে পৌঁছালে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করার জন্য পর্যাপ্ত কারণ পাবেন তিনি।
গত দুবছরে বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইসলামপন্থিদের কাছ থেকে আসা কঠিন সব চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি দেশের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য লড়াই করেছেন। আংশিকভাবে আরব দেশগুলোর অর্থায়নে স্থাপিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান, স্কুল আর মসজিদের বিরাট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসলামপন্থি এসব গ্রুপের কয়েকটিকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে। এমন একটি গ্রুপের নাম হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালে এক প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে তারা পরিচিত হয়ে ওঠেন। আর ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হতে সাহায্য করেছিলেন অনন্ত বিজয় দাশ।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ইসলামপন্থি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে শুরু হয় গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন। ঢাকার কেন্দ্রে প্রতিবাদকারীদের ঢল নামে। ওই কর্মসূচি শাহবাগ আন্দোলন নামে পরিচিতি পায়। সে সময় শেখ হাসিনার নামেমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে তাদের নিজস্ব লক্ষ্য পূরণে ওই আন্দোলনের সঙ্গে সহমত হতে আগ্রহী দেখা যায়। আর তাই যথারীতি বিরোধী দল ইসলামপন্থিদের অবশ্যম্ভাবী পাল্টা প্রতিবাদের পেছনে অবস্থান নেয়। ইসলামপন্থিদের ওই প্রতিবাদে সরকার পতনের চেষ্টায় এবং সারা বাংলাদেশ জুড়ে ১৩ দফা শরিয়াভিত্তিক কঠোর শাসন জারি করার লক্ষ্যে দেশের হাজার হাজার মাদরাসা ছাত্রকে দাবার বড়ে হিসেবে তালিকাবদ্ধ করে। তাদের পাল্টা প্রতিবাদের অগ্রযাত্রা এতো বড় আর উদ্বেগজনক ছিল যে সরকার হেফাজত নেতৃত্বকে কিনে ফেলার চেষ্টা করেছিল বলে ধারণা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তারা ২০১৩’র মে মাসে সহিংসভাবে একটি প্রতিবাদ দমন করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু ইসলামপন্থি আর সরকারের মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র বা অন্য উদ্দেশ্যে গোপন চুক্তি বা সহযোগিতার’ ধারণাটি ছিল অনন্ত বিজয় দাশের মতো নাগরিকদের সব থেকে অস্বস্তির কারণ। সরকারকে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে তা লক্ষ্য করে শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ তা স্বীকারও করেছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি লক্ষ্য করেন, আজকাল সরকারের প্রত্যেকে ‘নাস্তিকের’ তকমা গায়ে লাগা এড়াতে নিশ্চয়ই সতর্ক থাকবেন। তার নিজের মায়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি অনেক বেশি ব্যস্ত যে কারণে কুপিয়ে হত্যার শিকার হওয়া ব্লগারদের দিকে তত বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই আসলে সত্যি হতে পারে। বাংলাদেশের নেতাদের যে কোন কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকার অব্যাহত আর মরিয়া চেষ্টা এক ধরনের মনোযোগ বিচ্যুতির সৃষ্টি করেছে যা বিবেচনাহীনতার শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যকার যুদ্ধের প্রথম বলি হিসেবে যদি এ তিন ব্লগারকে ধরা হয় তাহলে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বলি খুব বেশি দূরে নয়।