কাপাসিয়ায় রাজনীতির পিঠে ধর্ষন মামলার আসামী! বঙ্গতাজ কন্যা জানেন!!

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


ধর্ষণ ও ধর্ষনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব তারপর বাচ্চাসহ মা নানীকে অপহরণ এবং অবশেষে আসামীর হেফাজত থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করার পরও থানায় একটি নিয়মতি মামলা না হওয়ার নজীর দেশে খুব একটা নেই। এ ধরণের স্পর্শকাতর মামলায় আসামী সাথে সাথে গ্রেফতার হয়। কখনো মামলা হওয়ার আগে আবার কখনো আসামী গ্রেফতার করার পর মামলা রুজুর ইতিহাস রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কাপাসিয়ায় সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের রীতি পুরোই বিপরীত। যে দেশে নারী জাতির প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকালে বিচার করার ট্রাইব্যুনাল আছে, সেদেশে ধর্ষনে বাচ্চা প্রসবের পর বাচ্চা মা ও বাচ্চার নানীকে অপরহণ করে আসামীর পক্ষ আর পুলিশ আসামীর হেফাজত থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করলেও আইনী বাঁধার কারণে কোন আসামী গ্রেফতার সম্ভব হয় না। এটা নিঃসন্দেহে নতুন উদাহরণ। সমসাময়িক সময়ে রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার মেয়র ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর পালিয়ে গিয়ে গতকাল বরগুনা থেকে গ্রেফতার হলেন। অথচ গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় ধর্ষণ মামলার আসামী থানার সামনে পরিষদে বসে তার পক্ষে মানববন্ধন করালেন। হায়রে আইন, অদভূদ তার প্রয়োগ।

আলোচনার মধ্যে একটি জিনিস লক্ষ্যনীয়। ২৯ আগষ্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিমের বক্তব্য প্রচার হওয়ার পর (সিরিয়াস রেকর্ড) আইনী নিয়মেই থানা পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব ও পিবিআই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট বিষয়টি দেখভাল করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। বরং আসামীর দেয়া জিডি ও অভিযোগ থানায় গ্রহন করা হয়েছে। বিচিত্র দুনিয়ার অদ্ভুদ কালা কানুন। অবশেষে ভিকটিমের বাবা আদালতে আবেদন করে তার মেয়ে নাতনী ও তার স্ত্রীকে আসামীর হেফাজত থেকে পিবিআই এর মাধ্যমে উদ্ধার করেছেন। এখানে প্রশ্ন এসেই যায়, আমাদের দেশে গোয়েন্দা সংস্থার সকল ইউনিট সকল জায়গায় সক্রিয় কি না। কাপাসিয়ায় গোয়েন্দা ইউনিটের কোন তৎপরতা ছিল না, না নেই সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। ধর্ষন নয়, একজন নাগরিক যখন নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন মর্মে রাষ্ট্রের নিকট খবর হয় তখন রাষ্ট্রের উচিত ওই নাগরিককে উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে নেয়া। সেই শেষ নাগরিক সৌভাগ্যটাও ভিকটিমের পরিবারের হল না। কারণ ভিকটিম গরীব মানুষ তাই টাকা পয়সা নেই। এটা জাতির জন্য লজ্জার।

একটি বিষয় বলাবলি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে বঙ্গকন্য সিমিন হোসেন রিমি কাপাসিয়ার এমপি থাকাকালীন সময়ে একজন নারী সর্বস্ব হারিয়ে আসামী দ্বারা অহরণ হবেন আর আইন শঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শক হবেন,তাজউদ্দীন সাহেবের মেয়ের আসনে এই নজীর বেমানান। শুধু বেমানানই নয়, গতকাল রাজনৈতিক ব্যানারে আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধনও হয়েছে। গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া আসনে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অভিভাবক ও এমপি সিমিন হোসেন রিমির দল কি ভাবে একজন অসহায় নারীর ন্যায় বিচারে প্রভাব ফেলতে দলকে ব্যবহার করলো, তা জানা নেই। আওয়ামীলীগের রাজনীতির পিঠে ধর্ষন মামলার আসামী উঠে গেলো আর সিমিন হোসেন রিমি জানলেন না, এটা বিশ্বাস করতে জনগনের কষ্ট হচ্ছে।

প্রশ্ন আসে, প্রমান ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না। এটাও ঠিক। কিন্তু এই আইনে পুলিশ গ্রেফতার করা বাধ্যতামূলক করে রেখেছে। ঘটনা ঘটলেই পুলিশ ধরবে আর নির্দোষ হলে রায়ে খালাস পেতে হবে। এটা আইন ভেঙ্গে রীতি করে ফেলেছে পুলিশ। এছাড়া যে আসামী মামলার আগেই ভিকটিমকে বাচ্চা ও মা সহ অপহরণ করে নিজের কাছে রাখতে পারেন, সে আসামী বাইরে থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার কি ভাবে প্রভাবমুক্ত ভাবে সম্পন্ন হবে, তা প্রশ্নের জন্ম দিবেই। আর তার প্রমান গতকাল কাপাসিয়ায় রাজনৈতিক মানববন্ধন।

একজন আইনজীবী বলেছেন, ভিকটিম অনিরাপদ খবর জেনেই পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে পারত। এ ছাড়াও আসামীর করা জিডি তদন্তে গিয়েও পুলিশ ভিকটিম উদ্ধার করতে পারত। কিন্তু পুলিশ একটাও করেনি। বরং কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আর জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জিডি বা অভিযোগ নিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রে কপাসিয়া থানা পুলিশ শুধু নয়, সংশ্লিষ্ট কোন সংস্থা বা রাজনৈতিক দল বা অসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করা সরকারী বেসকারী দপ্তরও দায় এড়াতে পারে না। আর সাথে সাথে জাতিকে খবর জানাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরাও দায় থেকে মুক্তি পাই না।

রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
তাং ০৮/০৯/২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *