সাখাওয়াত চেয়ারম্যান ভাগ্যবান আসামী! উদাহরণ হলো!

Slider টপ নিউজ


গাজীপুর: আইন অন্ধ। আইন চোখে দেখে না। প্রমান ছাড়া আইনে বিচার হয় না। স্বাক্ষী ও প্রমান আইনে সঠিক হলেই বিচার হয়। আইন অন্ধ হউক আর আইনের চোখে শক্তিশালী লেন্স থাকুক, আইন কাপাসিয়ার জন্য এক রকম এটা বলা যেতে পারে। কাপাসিয়ায় আলোচিত ধর্ষন মামলার আইনী প্রক্রিয়া যদি ডিএলআর (ঢাকা ল রিপোর্ট বা ডিএলআর হলো আপিল বিভাগের কোন আদেশ যখন বিচারে অনুকরণীয় বলে আইনে পরিনত হতে পারে) হতো তাহলে এই সুবিধাটা সকলেই পেতো। ধর্ষণের পর বাচ্চা প্রসব আবার বাচ্চা সহ ভিকটিম এমনকি ভিকিটিমের মাকেও অপহরণ করার পরও থানায় মামলা হয় না। ভিকটিমের পিতা পলাতক থেকে বের হয়ে আদালতে মামলা করে আবার পলাতক হয়ে যায়। আর আদালত মামলার প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলে দীর্ঘ সময়ের তারিখ দেয়। এটা আইনের ফাঁকফোকর বলা ঠিক হবে। কারণ এই দীর্ঘ সময়ে আসামী বাইরে থেকে আলামত নষ্টের কাজটিও করতে পারবেন ঠান্ডা মাথায়। আসামী দোষী না নির্দোষী তা প্রমান হবে রায়ে। রায়ের আগে আসামীকে আইনী সুবিধা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও কাপাসিয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান সেই সুযোগটি পেলেন। নারী শিশু ট্রাইব্যুনালে সাখাওয়াতের মত আসামী আগে কখনো দেখিনি। নি:সন্দেহে সাখাওয়াত সাহেব একজন ভাগ্যবান আসামী।

মনে পড়ে যায়, টিভির টকশোতে একটি মন্দ শব্দ প্রয়োগের কারণে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন জেল খেটেছেন অনেক দিন। ধর্ষণ মামলায় একজন পৌর মেয়রও পলাতক বর্তমানে। কিন্তু ধর্ষন করে বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চাসহ ভিকটিম ও বাচ্চার নানীকে অপহরণের পরও খোলামেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন আসামী সাখাওয়াত। অবশেষে থানা পুলিশ নয়, পিবিআই ভিকটিম, ভিকটিমের বাচ্চা উদ্ধার করতে গিয়ে বাচ্চার নানীকেও উদ্ধার করেছেন আসামীর শশুরবাড়ি থেকে। এরপরও আসামী গ্রেফতার হবে না কারণ আইনে বলা নেই বলে। চমৎকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাপনা।

ঘটনার পর স্থানীয় থানায় মামলা হলে আসামী গ্রেফতার ও ভিকটিমগুলো উদ্ধার করা যেতো। কিন্তু থানা পুলিশের রহস্যজনক নীরবতার কারণে অসহায় একজন পিতা আদালতের মাধ্যমে মেয়ে, মেয়ের মা ও নাতনীকে উদ্ধার করলেন তাও আবার আসামীর দখল থেকে। এই ঘটনায় আইনে বলা না থাকায় কোন আসামী গ্রেফতারও হয়নি। এই ক্ষেত্রে সাখাওয়াত সাহেব একজন ভাগ্যবান আসামী। আইন নিজের গতিতে চলে বলেই সাখাওয়াত সাহেব আইনের আওতার বাইরে রয়েছেন কারণ তাকে হেফাজতে আনতে আইনে বলা নেই।

বাংলাদেশে মিথ্যা ধর্ষণ, মিথ্যা অপহরণ, মিথ্যা নারী নির্যাতন ও হত্যা সহ অনেক ঘটনার মিথ্যা মামলা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় কারাভোগের পরও মিথ্যা প্রমান না হওয়ায় অনেকে জেলেও আছেন। কিন্তু ঘটনা সত্য হওযার পরও আসামী আইনের ফাকে বাইরে থেকে অসহায় মেয়ের পরিবারের সাথে মোকাবেলা করলে বিচারের ভবিষৎ কি হবে, তা আন্দাজ বা অনুমান করা যায়। এই ধর্ষনের বিচারে যাই হউক, আইনী প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপে সাখাওয়াত একজন ভাগ্যবান আসামী এতে কোন সন্দেহ নেই। সাখাওয়াতের মতো ভাগ্য যদি এই মামলার সকল আসামীর হতো তবে বিচার বিভাগ আরো প্রশংসিত হতো।

প্রসঙ্গত: কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কাপাসিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রধানের বাসার কাজের মেয়ে অন্ত:সত্বা হয়ে পড়লে চেয়ারম্যার ৭মাসের গর্ভবতি ভিকটিমকে কাজের ছেলের সাথে বিয়ে দেন। এরপর ভিকটিমকে ভাড়া বাসায় সরিয়ে নেন। ১৬ আগষ্ট ভিকটিম একটি কন্য সন্তান প্রসব করেন। সন্তানটি সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের বলে বাচ্চা কোলে মেয়েটি গণমাধ্যমে বলার পর ২৯ আগষ্ট বাচ্চা সহ মেয়ে ও মেয়ের মাকেও অহরণ করেন সাখাওয়াত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও শ্যালক। এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানা পুলিশ কোন মামলা গ্রহন না করায় ভিকটিমের বাবা গাজীপুর নারী শিশু আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত ২৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন। আজ ভোরে আসামীর শশুর বাড়ি থেকে পিবিআই ভিকটিমকে বাচ্চা সহ উদ্ধার করে সাথে বাচ্চার নানীও উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। পিবিআই বলছে, আদালতের আদেশ প্রতিবেদন দেয়ার। গ্রেফতারের নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *