ঢাকা: এবার উপকূল থেকে ৮০০ অভিবাসী বহনকারী দু’টি নৌকা সাগরে ফিরিয়ে দিলো মালয়েশিয়া। ভাগ্য নিয়ে সাগরেই ভেসে যাওয়া এই অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশি ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫০০ ও ৩০০ করে অভিবাসীবাহী নৌকা দু’টি বৃহস্পতিবার (১৪ মে) সকালে উপকূলে ঘেঁষতে চাইলে সাগরে ফিরিয়ে দেয় মালয়েশিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী।
নৌকা দু’টিকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে মালয়েশিয়ার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি সাংবাদিকদের বলেন, লংকাবি দ্বীপে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ অভিবাসী উদ্ধারের পর বুধবার (১৩) পেনাংয়ের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে ৫০০ অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা পাওয়া যায়। এখন আসলে আমরা কী করতে পারি?
তিনি বলেন, যারা আমাদের সীমান্ত ভেঙে ঢুকতে চাইছে তাদের সঙ্গে আমরা এখনও ভালো আচরণ করছি, এখনও তাদের সঙ্গে মানবতাবোধ দেখিয়ে আচরণ করছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এভাবে অবৈধ অভিবাসীর ঢল সামলাতে হবে আমাদের।
মালয়েশিয়ান এ উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন এই বার্তাই স্পষ্ট দিতে হচ্ছে যে, এই ধরনের অভিবাসীদের আমরা গ্রহণ করতে পারছি না।
বুধবার (১৩ মে) বিকেলে পেনাংয়ের জলসীমায় ৫০০ অভিবাসী একটি নৌকা দেখতে পায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর লংকাবি দ্বীপের উপকূলে পাওয়া যায় ৩০০ অভিবাসীবাহী আরেকটি নৌকা। রাতভর কোনোটিকেই উপকূলে ঘেঁষতে না দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল হতেই সাগরে ফিরিয়ে দেয় মালেশিয়ান প্রশাসন।
বরাবরের মতো ধারণা করা হচ্ছে, নৌকা দু’টির আরোহী অভিবাসীরা মায়ানমারের অধিকারবঞ্চিত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুর লোকজন হতে পারে। থাকতে পারে কিছু বাংলাদেশিও।
এর আগে, গত রোববার (১০ মে) ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে ম্যানতাং পুনতংগামী দু’টি নৌকা থেকে ৬০০ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড ও পুলিশ।
এরপর সোমবার (১১ মে) মালয়েশিয়ার লংকাবি দ্বীপের সমুদ্র সৈকতের কাছ থেকে তিনটি বড় নৌকা থেকে এক হাজার ১৮ অভিবাসীকে উদ্ধার করে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী। উদ্ধার ওই অভিবাসীদের মধ্যে ৫৫৫ জনই বাংলাদেশি ছিলেন।
একই দিন আবারও ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূল থেকে বাংলাদেশিসহ প্রায় ৪০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টকার্ড ও পুলিশ। তবে, এদের মঙ্গলবার (১২ মে) সাগরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়ার মতো থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও অবৈধ অভিবাসীদের ভূ-খণ্ডে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তবে, মানবিক কারণে এদের সাগরে ফিরিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ৮০০ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজারের মতো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসী বর্তমানে সাগরে ভাসছে।
ইউএনএইচসিআর’র তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে, অথবা লাশ হয়েছে।
সম্প্রতি মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে বাংলাদেশিসহ অভিবাসীদের প্রাণ হারানোর ঘটনায় পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় তোলপাড় চলছে। বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এই দালালদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এরই মধ্যে কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। কিন্তু প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়া উপকূলে দফায় দফায় অভিবাসী উদ্ধারের খবর আসছে।