গাজীপুর: হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য জমি দখল করে বাড়ি গাড়ি ইটভাটা, রেষ্টুরেন্ট সহ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান। হিন্দুদের জমি কিনে ধরে রাখতে পারেন নি বরং স্বামীকেই হারাতে হয়েছে সাখাওয়াতের কারণে। স্বামী মৃত্যুর জন্য সাখাওয়াত চেয়ারম্যান দায়ী বলে দাবী করেছেন কাপাসিয়ার সাফাইশ্রী গ্রামের মৃত আব্দুর রউফের স্ত্রী মিনারা বেগম।
৪মিনিটের ভিডিও বক্তব্য ও মৌখিক বক্তব্যে মিনারা বেগম বলেন, আমার শশুর গনি মিয়া, নগেন্দ্র চন্দ্র বর্মন গং এর নিকট থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে ৪৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জাল দলিল ও জাল কাগজ তৈরী করে এক হিন্দু নারীর মৃত্যুর দুই দিন পর একটি জাল দলিল তৈরী করে দখল হয়েছে তার স্বামীর জমি। ২০১৬ সালে এই জমি দখলের সময় স্বপরিবারে মিনারা বেগমরা আহত হলেও পুলিশ কোন মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করতে গিয়ে আদালত চত্বরে সাখাওয়াত বাহিনী কর্তৃক প্রচন্ড চাপে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মিনারার স্বামী আব্দুর রউফ মারা যান।
বর্তমানে জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সাখাওয়াত বাহিনীর সাথে না পেরে জমি ও স্বামী হারা হয়ে আল্লাহর নিকট বিচার দিয়ে বসে আছেন বিধবা মিনারা বেগম।
কাপাসিয়ায় আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষন ও ধর্ষনের পর কন্যাসন্তান সহ ভিকটিমকে অপহরণের মামলা হওয়ার পর এখন নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। জিরো থেকে হিরো হওয়ার কাহিনী এখন চাওড় হচ্ছে। প্রথমে মিডিয়ার সংবাদ বন্ধ করতে একটি সিন্ডিকেট কাজে লাগিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়ছে। ঘটনার চলমান প্রবাহের কোন মুহুর্তেই পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। থানা পুলিশের প্রতি আস্থা হারিয়ে ভিকটিমের বাবা, মেয়ে ও নাতনী উদ্ধারের জন্য অবশেষে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। আদালত পিবিআইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।
কাপাসিয়া সর্বমহলে এখন একই কথা সাখাওয়াত কাহিনী। ভিকটিম উদ্ধার না হওয়ায় সকলেই চিন্তিত। কারণ অন্যের হেফাজতে থাকা ভিকটিম যতক্ষন পর্যন্ত না আদালতে উঠবে ততক্ষন ভিকটিম ও তার নবজাতক শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে চরম অস্বস্থি থেকেই যাবে।
এদিকে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দূনীতির অভিযোগও উঠছে। সাখাওয়াত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট করে কাপাসিয়ার কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছেন। সাখাওয়াতের একটি বাহিনীও রয়েছে। নিজ পরিবার কেন্দ্রিক গড়ে উঠা এই বাহিনী ইতোমধ্যে হিন্দুসম্প্রদায়ের অসংখ্য জমি দখল করেছে। কাপাসিয়া শহরের আদালত পাড়ায় তিন তলা বাড়ি, পুকুর ভরাট করে চার তলা বাড়ি সহ ৩/৪টি বাড়ি তিনি করেছেন। নিজের নামে স্ত্রীর নামে ও দুই ছেলেল নামে কিনেছেন প্রচুর জায়গা জমি, করেছেন বাড়ি ও গাড়ি। ২০১৬ সালে প্রথম চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সাখাওয়াত বাহিনীর এ্যাকশন। সাখাওয়াতের বড় ভাইকে সাখাওয়াত প্যানেল চেয়ারম্যান করে রেখেছেন নিয়ম ভেঙ্গে। রাউতকোনা এলাকায় রয়েছে সাখাওয়াতের ইটের ভাটা। রাজধানী ঢাকার গুলশানে সাখাওয়াত করেছেন একটি দামী রেষ্টুরেন্ট। কাজের বিনিময় টাকা বা কাবিটা ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য বা কাবিখা কর্মসূচির নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে। জোরপূর্বক জনৈক হারুণ মিয়ার ইটের ভাটা থেকে ২৬৪ গাড়ি ইট লুটের অভিযোগে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে হারুন মামলাও করেছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাখাওয়াত চেয়ারম্যানকে কাপাসিয়ায় পাওয়া না গেলেও তার পক্ষের লোকজন বলছেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।