গাজীপুর: গৃহকর্তা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে বাচ্চা জন্ম দেয়ার অভিযোগ দিয়ে গৃহকর্মীই অপহরণ হয়ে গেছে নবজাতক বাচ্চা সহ। অবশেষে ভিকটিমের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া গেলো এক মসজিদের ভেতরে।
১৫ আগষ্ট থেকে ঘটনার ধারাবাহিকতা চলমান থাকলেও ১৬দিনে পুলিশ কোন অভিযোগ পায়নি।
মঙ্গলবার(৩০ আগষ্ট) গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায় গিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিকটিম ভিডিও বক্তব্যে বলেন, তার বয়স ১৬ বছর। সে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধানের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী বাসায় না থাকলে চেয়ারম্যান তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করেছেন একাধিকবার। দুই মাস আগে ভিকটিম গর্ভবতি বলে ধরা পড়ার পর একই বাসার পুরুষ কাজের লোক রহিতের সাথে চেয়ারম্যান জোর পূর্বক ভিকটিমকে বিয়ে দেন। চলতি মাসের ১ তারিখ গর্ভবতি ভিকটিমকে চেয়ারম্যান কাপাসিয়ার শীতলক্ষা নদী পাড় করে তরগাঁও খেয়াঘাট নামক গ্রামে জনৈক মমিন মিয়ার বাড়িতে মাসিক ৯’শ টাকায় ভাড়া করে রাখেন। ১৫ আগষ্ট রাতে ভিকটিমের প্রসব বেদনা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলে ১৬ আগষ্ট কাপাসিয়া সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভিকটিম সন্তান প্রসব করেন। অতঃপর সন্তান সহ ভিকটিম ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন।
ভাড়া বাসার মালিকের পুত্রবধু আয়েশা আক্তার জানান, এই বাসায় ভিকটিমের কাছে চেয়ারম্যানে স্ত্রী প্রায়ই আসতেন। তিনি আরো জানান, বাচ্চার বাবার নাম যেন তার স্বামী চেয়ারম্যানের নাম না বলেন সেই জন্য ভিকটিমকে চাপ সৃষ্টি করেন ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী।
আয়েশার বক্তব্য মতে, সোমবার(২৯ আগষ্ট) ১৯টি মিডিয়ার সাংবাদিক ভিকটিমের জবানবন্ধী নেয়। এরপর সোমবার রাতেই চেয়ারম্যানের শ্যালক মামুন মিয়া লোকজন নিয়ে এসে ভিকটিমকে বাচ্চা সহ নিয়ে ভাড়া বাসা থেকে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘটনা চেপে যেতে বলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিকটিমের বাবা( আইনী কারণে পরিচিতি গোপন) কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড মসজিদে আদায়কারীর কাজ করেন। মঙ্গলবার(৩০ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় কাপাসিয়ায় ওই মসজিদে গেলে মোয়াজ্জিন হাফেজ নাজমুল ইসলাম মসজিদের বরান্দায় রাখা ভিকটিমের ব্যবহৃত ঘরের জিনিসপত্র দেখিয়ে বলেন, এ গুলো রেখে মেয়ে ও বাচ্চা নিয়ে গেছে কে বা কারা। তবে কয়েক দিন ধরে ভিকটিমের বাবা মসজিদে আদায়কারীর কাজে আসেন না বলে জানিয়েছেন মোয়াজ্জিন।
এদিকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তিনি এই বাচ্চার বাবা নন। ডিএনএ টেষ্ট করার দাবী করেন তিনি। সাখাওয়াত হোসেন প্রধান কাপাসিয়া সদর ইউপির চেয়ারম্যান ও কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, একটি মেয়ে ধর্ষিত হয়ে সন্তান প্রসব করল, এবং সন্তান সহ ভিকটিম অহপরণ হয়ে গেলো অথচ ১৬দিনেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। এই ঘটনা আইনের শাষনের পরিপন্থী ও মানবাধিকারের চরম লংঘন। তারা দ্রুত ভিকটিম ও বাচ্চা উদ্ধার এবং ধর্ষক ও অপহরণকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
বিষেজ্ঞদের মতে, গর্ভবতি কোন নারীর সঙ্গে বিয়ে হয়না। এই গর্হিত কাজটি করে যারা ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।
৩০ আগষ্ট মঙ্গলবার বেলা ১টা ২৫ মিনিটে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য নিতে গেলে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশ করার সাথে সাথে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধান পরিষদ থেকে বেরিয়ে দ্রুত চলে যান ও যাওয়ার সময় বলেন, নামাজ পড়ে আসি।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত কাপাসিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এফ এম নাসিম বলেন, এ রকম ঘটনা শুনেছি। কেউ অভিযোগ দেয়নি।