তিন দিনের মধ্যে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ঢুকবে বাংলাদেশর ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে। এসব তেল বর্তমানে খালাসের অপেক্ষা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। পরীক্ষ-নিরীক্ষা শেষে আমদানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম করপোরেশন।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ার পর বৈশ্বিক সংকট দেখা দেয়। পৃথিবীর তেল সমৃদ্ধ দেশগুলো থেকে কম মূল্যে তেল আমদানির জন্য নানামুখী তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। বৈশ্বিক এই সংকট পরিস্থিতিতে ভারত, চীনসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল আমদানি করছে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। তবে, তা নাকোচ করে বাংলাদেশ সরকার।
রাশিয়ার জ্বালানি তেলের বিশিষ্ট বলছে, এটি দেশে ব্যবহারের উপযোগী নয়। এতে সালফারের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই ব্যবহার করতে হলে পরিশোধন করার প্রয়োজন হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে। এসব বিষয়ে বিবিচেনা করে প্রথমে বাংলাদেশ সরকার নাকোচ করে দেয়। দিতীয় দফায় আবারও প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। ইতোমেধ্য রাশিয়ার একটি তেলের নমুনা চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। তেলগুলো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইর্স্টান রিফাইনিারির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হবে। এরপর পর্যালোচনা করে আমদানির জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
এদিকে ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে যেহেতু তেলের দাম বেড়ে গেছে, তাই যে দেশে কম মূল্যে তেল পাওয়া যাবে সেখান থেকে আমদানি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ার শীর্ষ তেল কোম্পানি রোজনেফট পরিশোধিত তেল আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আসলে পুরোপুরি পরিশোধিত নয়। ব্যবহারের জন্য এটি আবার পরিশোধন করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর দাম ও অন্যান্য খরচ নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানান, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তেলের মান, ব্যবহারের উপযোগিতা, দাম, আনার খরচসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এক দফা বৈঠকে প্রাথমিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তেলের নমুনা এখন পর্যন্ত পরীক্ষাগারে পৌঁছায়নি। এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বৈশ্বিক সংকট পরিস্থিতিতে ভারত, চীনসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কেনা শুরু করে। তবে বাংলাদেশের আগ্রহ পরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে, যা সরবরাহে সম্প্রতি একটি প্রস্তাব দিয়েছে মস্কো।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বর্তমানে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত থেকে আনা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) শোধন করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেনসহ বিভিন্ন রকম জ্বালানি তেল উৎপাদন করে। বছরে ১৫ লাখ টন তেল শোধনের সক্ষমতা আছে তাদের। এ থেকে বছরে ৬ লাখ টন ডিজেল পাওয়া যায়। আর দেশে ডিজেলের চাহিদা রয়েছে বছরে ৪৬ লাখ টনের মতো। মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭৫ শতাংশই ডিজেল। তাই কম দামে ডিজেল কেনায় আগ্রহ আছে সরকারের।