কিংবদন্তি অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক নায়করাজ রাজ্জাকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের ২১ আগস্টের এই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। এক দিন পর ২৩ আগস্ট তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। রাজ্জাককে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল দেশের গোটা অভিনয় জগৎ। চলচ্চিত্র আছে, নেই নায়করাজ। যার অভাবে শুধুই শূন্যতা চারদিকে। খ্যাতিমান এ অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে রয়েছে বিশেষ আয়োজন। সেসব আয়োজনে দেখানো হবে নায়করাজের সিনেমাগুলোর বিভিন্ন মুহূর্ত এবং গান। এ ছাড়া একসঙ্গে কাজ করেছেন এমন কয়েক অভিনয়শিল্পী রাজ্জাকের সঙ্গে তাদের কাজের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করবেন। পাশাপাশি চ্যানেলগুলোতে দেখানো হবে রাজ্জাক অভিনীত কয়েকটি সিনেমা। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে এফডিসিতে রয়েছে বিশেষ দোয়া ও আলোচনাসভার আয়োজন। প্রতিবছরই এই আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। নায়ক রাজ্জাক এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি ছিলেন।
কমলাপুর থেকে গুলশান কলকাতায় টুকটাক অভিনয় করা রাজ্জাকের অভিনয়জীবনের বিকাশ ঘটে ঢাকায়। তবে শুরুর জীবনটা মোটেও সহজ ছিল না। কষ্টে দিনযাপন করতে হয়েছে। কলকাতার জায়গাজমি বিক্রি করে স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকা শুরু করেন। ঢাকায় থাকার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় উৎসাহ আর আগ্রহ ছিল তার স্ত্রী খায়রুন্নেসা লক্ষ্মীর। ১৯৬৪ সালে রাজ্জাক তার স্ত্রীকে নিয়ে যখন ঢাকায় আসেন, তখন প্রথম সন্তানের বয়স আট মাস। খায়রুন্নেসা বললেন, ‘ঢাকায় আমার এক খালা ও মামা থাকতেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসি। খালার বাড়িতে এক সপ্তাহ ছিলাম। এরপর আমরা কমলাপুরে বাসা নিই। এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। তবে ও কয়েকবার বলেছে, চলে যাবে। আমি বলেছি, থাকি না এখানে। আমার তো এখানে ভালো লেগে গেছে। তারপর আমাকে রেখে কলকাতায় গেল। আমাদের জমি ছিল, বিক্রি করে চলে আসে।’ ঢালিউডে নায়ক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র জহির রায়হানের বেহুলা। স্মৃতি হাতড়ে খায়রুন্নেসা বললেন, ‘ঢাকায় থাকতে থাকতে একসময় আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে পরিচয়। তার একটি ছবিতে অভিনয় করল। এরপর জহির ভাই (জহির রায়হান) ডাকল। আস্তে আস্তে ব্যস্ত হয়ে উঠল। পুরোদমে ব্যস্ত হতে এক-দেড় বছর লেগে গেল। আমরা তখন কমলাপুরে থাকতাম। এক বেড ও ড্রয়িং এবং রান্নাঘর ও দুই বাথরুমের বাসার ভাড়া ছিল তখনকার দিনে ৩০০ টাকা।’ জনপ্রিয় হওয়ার পর নায়করাজ চলে আসেন গুলশানে। তৈরি করেন বাড়ি। নাম দেন লক্ষ্মীকুঞ্জ। একটা সময় হইচই আর মানুষের আনাগোনায় ভরে ছিল লক্ষ্মীকুঞ্জ। কত সিনেমার জন্ম এই গুলশান ২-এর লক্ষ্মীকুঞ্জে। সেই দিনগুলো ভীষণ মিস করে এই পরিবার। এখন আর তেমন বাইরের মানুষের আনাগোনায় ম-ম করে না এই লক্ষ্মীকুঞ্জ। ছোট্ট নাতনিদের কোলে নিয়ে বসে থাকেন না নায়করাজ। ভুল হলে ধমক দিয়ে শুধরে দেওয়ার সেই মানুষটার অভাবে শুধুই শূন্যতা চারদিকে।
দীর্ঘ ফিল্মি ক্যারিয়ারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে সাতটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে তাকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে রেকর্ড সাতবার। এ ছাড়াও তার ঝুলিতে আছে নামিদামি অসংখ্য পুরস্কার।