আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা অন্যের আনুকূল্যে টিকে থাকে তাদের এই দেশ শাসন করার কোনো অধিকার নেই। তাদের এদেশের সরকারে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই।
তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে’ তিনি তার জায়গা থেকে কিন্তু সরে আসেননি। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বক্তব্যকে আবারো ন্যায্য বলেছেন। সুতরাং আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে পরিষ্কার ভাষায়।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং জ্বালানী তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ভোলায় পুলিশের গুলিতে নূরে-আলম ও আব্দুর রহিমকে হত্যার প্রতিবাদে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ইউট্যাব মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। নিজেদের স্বাধীন বলে পরিচয় দিতে গর্ব বোধ করে। তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারের কাছে বলেন শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের সাহায্য করেন। অর্থাৎ তারা একথা বলতে চান যে, ভারত সরকারের আনুকূল্যে এই সরকার টিকে আছে।
তিনি বলেন, দেশে আজকে কারা ভালো আছে, লুটেরা এলিট শ্রেণি। এই লুটেরা এলিট শ্রেণি কারা? এরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা। তাদের মন্ত্রী, বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা। এক কথায় বলা যায়, এই সরকার লুটেরা সরকার। এ সরকারের সাথে মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সরকার দেশকে ইতোমধ্যে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এই সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে তারা আমাদের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে। আজকে দুঃখ হয়, এই দেশ ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, সে যুদ্ধে আমাদের যে আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল; সে আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সকলের অধিকার রক্ষা পাবে তেমন বাংলাদেশ। আজকে আমরা কী দেখছি বাংলাদেশের সমস্ত অধিকারগুলোকে কেড়ে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পূর্বে আপনার কি কখনো গুমের কথা শুনেছেন? কখনোই শুনেননি। জুডিশিয়াল কিলিং এর কথা শুনেছেন। এখানে এখন তা-ই হচ্ছে। এভাবে বিরোধী পক্ষকে, বিরোধী মতকে দমন করার জন্য যে ফ্যাসিস্ট কায়দা, যে কর্তৃত্তবাদী কায়দা সেই কায়দায় তারা দেশকে এখন দখল করে নিয়ে পুরোপুরিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই পথগুলো অনুসরণ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মিডিয়ায় উঠে এসেছে ‘আয়না ঘর’ নামে একটি টর্চার সেল আছে। সেই টর্চার সেলে আমাদের নেতাকর্মীদের, মানুষদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টর্চার করা হয়। দিনের পর দিন মাসের পর মাস সেখানে রাখা হয়। তারপর কাউকে কাউকে হত্যা করা হয় আবার কাউকে কাউকে বছরের পর বছর রেখে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন সত্যিকার অর্থে একটি কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এ কথাটা আজকের নয় বিদেশী একটি জরিপে বহু আগেই বাংলাদেশ একটি স্বৈরাচার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, একথা উঠে এসেছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে, বাংলাদেশের যে আত্মা, সে আত্মাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের আত্মা ছিল একটি গণতান্ত্রিক আত্মা। আমাদের এসব স্বপ্ন ছিল সমৃদ্ধের গণতন্ত্রের একটি বাংলাদেশ, একটি মুক্ত সমাজ সেটাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে; বলেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী একটি মানুষ, তিনি হলেন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। কারণ তার একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তিনি এ দেশকে পার্মানেন্টলি অস্থিরতা, সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। কথাটি আমার নয়, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। যিনি সত্যিকার অর্থে একজন গণতন্ত্রের নেত্রী। তিনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করেছেন এবং এখনো তিনি বন্দি হয়ে আছেন। তিনি বলেছিলেন আজ থেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এই অবৈধ সরকার। এটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে না। আমরা লড়াই করেছি সংগ্রাম করেছি ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। দুই লাখ মা-বোনেরা ইজ্জত দিয়েছে। সেই দেশে আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ ফেসিস্ট সরকারকে বিদায় করে একটি সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই সরকারকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ইউট্যাবের মহাসচিব হয়েছেন অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, সাংবাদিক নেতা কাদের কোন চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।