সব দোষ গণমাধ্যমের!

Slider জাতীয় সম্পাদকীয়


বাংলাদেশর একাধিক মন্ত্রী গণমাধ্যমে নিজে কথা বলে পরে দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে গণমাধ্যমকেই অভিযুক্ত করেছেন। অনেকে নিজের দোষ গণমাধ্যমের উপর চাপিয়ে পাড় পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কারও কারও নিজের বক্তব্য অডিও বা গোপন ভিডিও আকারে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তা অস্বীকার করছেন। তবে অনেকেই নিজে কথা বলে অস্বীকার করে শাস্তির বাইরে থেকে গেছেন। আবার অনেকে অন্যের পোষ্ট করা ভিডিওতে তাকে অভিযুক্ত করার প্রতিবাদ করেও শাস্তি ভোগ করছেন। কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়া প্রচলিত আইন ও সংবিধানেও নেই। কিন্তু নিজের মুখে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে তা অস্বীকার করে অথবা দন্ডভোগ করেও বহাল আছেন শাস্তির আওতার বাইরে। প্রচলতি আইন ও সংবিধান কখন লংঘন হয় তা এখন আর স্পষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ আইনে দন্ডিত হলেও দলে প্রশংসিত হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। কে অপরাধ করল আর কে করল না, তা দল তেমনভাবে দেখছে না। সমর্থনের পাল্লা বে-আইনী হউক আর আইনী হউক ভারী হলেই এ্যাকশন। এ নীতি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে গেছে এখন।

অনুসন্ধান বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাহেব যে বেহেশতের কথা বলেছেন, তা নাকি গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। অথচ গণমাধ্যম মন্ত্রীর ওই শব্দটি বলার প্রেক্ষাপট বলা ছাড়া কোন সংবাদ করেনি। গণমাধ্যম যদি মন্ত্রীর বাক্যটা মৌলিক ধরে নিয়ে বিশ্লেষন করে প্রতিবেদন করত, তা হলে হিতে বিপরীত হতো। কারণ ইহকালে বেহেশত ও দোজখ নেই। আর বেহেশত বা স্বর্গ ও দোজখ বা নরক, প্রত্যেক ধর্মেই মৃত্যুর পর বলা হয়েছে। সুতরাং ইহকালকে পরকাল করে সব ধর্মের লোককে মুসলমান বানিয়ে বাংলাদেশকে বেহেশত ঘোষনা করার অভিযোগ ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন গণমাধ্যম করেনি। এটা ধর্মীয় অনভুতিতে চরম আঘাত। আবার একই মন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য দেশকে অনুরোধ করেছেন বলে গণমাধ্যমে কথা বলে আবার অস্বীকার করে গণমাধ্যমকেই দোষারোপ করছেন। অথচ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকেরা সরকার তৈরী, বাতিল বা টিকিয়ে রাখে। সেখানে অন্য দেশের কোন অভিমত লাগে না। মন্ত্রী বাহাদুরের এই কথা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য মারাত্বক হুমকি। দুটি বড় ধরণের অপরাধ করেও তিনি মন্ত্রী আছেন।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারের নৃশংসভাবে খুন করার ঘটনার প্রতিফলন বিপরীত ভাবে উপস্থাপন করেছেন তাও আবার শোকের মাসেই। মরহুমদের জান্নাতে যাওয়ার দোয়া না করে জাহান্নামে যাওয়ার দোয়া করেছেন। এখানে স্লিপ অব টাং হতে পারে তবুও একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই কথা বলতে পারেন না, বা অসচেতন মনে কথা বলা তার জন্য বেমানান। কারণ অনেকের দায়িত্ব নিজের কাধে নিলেই একজন অধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি হন আর তিনি অবশ্যই অবচেতন মনে বা অসচেতনভাবে কোন কথা বা কাজ করতে বা বলতে পারেন না। এখানে তিনি শপথভঙ্গ করেছেন।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ‍মুরাদ হাসানের কান্ড সকলেরই জানা। তিনি নারী জাতিকে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছেন এবং যা তিনি অস্বীকার বা দুঃখ প্রকাশও করেননি। তবুও তাকে সাংবিধানিক পদ থেকে সরানো হয়নি অথচ তিনিও শপথ ভঙ্গ করেছেন।

একজন পৌরসভার মেয়র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক কথা বলে আবার কিছুক্ষন পর লাইভে এসে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেও তাকে পদচ্যুত করার পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আরেকজন পৌর মেয়র অশ্লীল কথা বলে পদ হারা হওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে পদ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

এ ছাড়া বিচার বিভাগকে কটাক্ষ্য করার অভিযোগে দুইজন সাংবিধানিক দায়িত্বশীল ব্যাক্তি অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা দিয়ে স্বপদে বহাল আছেন।

গাজীপুর সিটিমেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জাহাঙ্গীর আলম নিজে ওই কথাগুলো কোন গণমাধ্যমে বলেননি তবুও প্রতিপক্ষের করা অভিযোগের জন্য তিনি বার বার ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হয়নি এবং তিনি জনগনের দেয়া পদ ও দলীয় পদ দুটোই হারিয়েছেন। কোন অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তি দিলে কারো কিছু বলার থাকে না। যখন তদন্ত ছাড়া শাস্তি দেয়া হয়, তখন কথা উঠবেই। জানা গেছে, সবশেষে জাহাঙ্গীর আলম দেরী করে হলেও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কারণ তিনি আদালতকে বলেছেন, কোন অভিযোগ তদন্ত ছাড়া ও তাকে আইনীভাবে অভিযুক্ত করা ছাড়া মেয়র পদের বাইরে রাখা যায় না।

এই সব ছাড়াও প্রায় সময় দেখা যায়, কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি গণমাধ্যমে কোন বিতর্কিত কথা বলে বিপদে পড়লে গণমাধ্যমের দোষ দেয়। যদিও গণমাধ্যম লাইভে বা অডিও ভিডিওতে সরাসরি কথা না বললে খবর দেয় না তবুও যতদোষ গণমাধ্যমের।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে যে কোন মিডিয়ার সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ার নানাবিধ কারণে সুযোগ নেই। কোন মিডিয়া কোন ইনটেনশন নিয়ে সংবাদ করে না। নিজেরা কথা বলে বিপদে পড়ে মিডিয়ার উপর দোষ চাপানো এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ তাদের মনেই থাকে না যে, তারা লাইভে সরাসরিও কথা বলেন। এখানে মিডিয়ার দোষ কোথায়! নিজের কবর নিজে খুঁড়লে অন্যের দোষ দিয়ে কি লাভ?

রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
তাং ২০/০৮/২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *