ঢাকা: প্রচণ্ড গরমে দিশেহারা নগরবাসী। শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের শেষ নেই। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে রাস্তার পাশের একটু সস্তি পাওয়ার আসায় তরমুজ খাচ্ছে এক রিকসাচালক ।
তাপদাহে জ্বলছে দেশ। ইতোমধ্যে দেশের কোনো কোনো স্থানে হালকা ধরনের বৃষ্টি হলেও আরো এক সপ্তাহের মধ্যে তাপদাহের হলকা প্রশমিত করার মতো ভারী বৃষ্টির সুখবর নেই। দেশব্যাপী বর্তমানে চলছে তাপপ্রবাহ। দেশের প্রায় সর্বত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহে শুকিয়ে আছে দেশ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গত সপ্তাহ থেকে ৩৯ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকছে। তা সত্ত্বেও প্রতিদিনই দেশের কোথাও কোথাও দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আঘাত করছে। আবার কোথাও বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী। এর ফলে স্থানীয়ভাবে সাময়িক ঝড়-বৃষ্টিতে তাপমাত্রা সহনীয় হয়ে উঠলেও পর দিনই তাপমাত্রা আগের অবস্থানে চলে আসছে।
ভারী বৃষ্টি না হওয়াটা অবশ্য কোনো কোনো এলাকার কৃষকের জন্য খুবই আকাক্সিত। যারা আগেই সেচ দিয়ে বোরো চাষ করেছেন তাদের ক্ষেতে ধান পাকবে পাকবে অবস্থায় আছে। এসব কৃষক কায়মনোবাক্যে দোয়া করছেন আল্লাহ যেন ধান ওঠানোর পর বৃষ্টিটা দেন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের আকাশে মেঘ সৃষ্টি হওয়ার মতো পরিবেশ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো কোনো কোনো স্থানে মেঘ হচ্ছে; কিন্তু তা থেকে বৃষ্টি হতে পারছে না। বৃষ্টি ঝরানোর মতো প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্প মেঘে থাকছে না। এটা ছাড়াও যেটুকু মেঘ সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশের আকাশে আটকানোর পরিবেশও অনুপস্থিত।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, বৃষ্টি হতে হলে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে জলীয় বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে হবে। আবার বাষ্প সমৃদ্ধ বায়ুকে বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসা আরেকটা বাতাস এসে আটকে দিতে হবে। তাহলেই বৃষ্টি হতে পারে। এ মুুহূর্তে বাংলাদেশের আকাশে এ ধরনের অবস্থা অনুপস্থিত। তিনি বলেন, দণি-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস আসছে না ও যা আসছে তা বাংলাদেশের উপকূলের দিক থেকে। এ বাতাসে যথেষ্ট জলীয় বাষ্প থাকছে না। বাতাস যত দূর থেকে আসবে তাতে তত বেশি জলীয় বাষ্প থাকে। অনেক দূর থেকে আসে বলে মওসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমানের মতে, বর্তমানে যে গতিতে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে দেশের স্থলভাগে এবং সাগরে তাতেও বৃষ্টি হবে না। বাতাসের গতি আরো বাড়তে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার। এটা অবশ্য আসছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে। এটা সৃষ্টি হয় আন্দামান উপসাগর এলাকা থেকে। দেশের অন্যত্র বাতাসের স্বাভাবিক গতি এর চেয়ে কিছুটা কম অথবা বেশি ছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মওসুমি বায়ু আসে আন্দামান উপসাগরীয় এলাকা থেকে। পরে এটি পশ্চিম-উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে শ্রীলঙ্কান উপকূলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের দিক স্পর্শ করে উড়িষ্যা, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে অবশেষে বাংলাদেশে তা প্রবেশ করে। এ বায়ু বেশির ভাগ সময় সাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এটা প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প নিয়ে আসে। ফলে বর্ষাকালে (জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বাংলাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
দীর্ঘদিন বৃষ্টি হচ্ছে না বলে থার্মোমিটারের পারদ কেবল ওপরের দিকেই উঠছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে তাপপ্রবাহের। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা ও সিলেট অঞ্চলসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে বর্তমান সময়ের চেয়ে আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। তবে পাঁচ দিন পরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাঁচ দিন পর বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।
দেশব্যাপী প্রচণ্ড তাপদাহে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার দেখা দিয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকার কারণে মাটি শুকিয়ে শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানিতে জীবাণুর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে শহরাঞ্চলে কাঁচা পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারাই বেশি করে আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকার মহাখালীর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে প্রতিদিনই প্রায় ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ সময় প্রচুর পানি পান করলে হিটস্ট্রোক থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। বাসি খাবার পরিহার করতে হবে, শহরাঞ্চলে কাঁচা পানি পান না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সাগরের অবস্থা : বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি স্বাভাবিক লঘুচাপ বিরাজ করছে। আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি অথবা দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে থেকে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মাঝারি ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশিষ্ট তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।