সৈকতে আছড়ে পড়ছে ৪ ফুটের ঢেউ, বিলীন হচ্ছে স্থাপনা

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজার সৈকতজুড়ে জোয়ারের সময় সাগরের পানি ২ থেকে ৪ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। এতে গত এক সপ্তাহ ধরে সৈকতের লাবণী ও সুগন্ধাসহ কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে। আর ভাঙনের মাত্রা অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই সৈকত এলাকা হারাচ্ছে সৌন্দর্য।

ইতিমধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকতের লাবণী পয়েন্টে স্থাপিত টুরিস্ট পুলিশের একটি বক্স ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেছে; আর ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের কার্যালয়, টুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়, লাবণী পয়েন্টের পর্যটন ছাতা মার্কেট এবং সুগন্ধা পয়েন্টের বিচ মার্কেটসহ বেশ কিছু স্থাপনা।

আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, সৃষ্ট নিম্নচাপের পাশাপাশি পূর্ণিমার প্রভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে কক্সবাজারসহ দেশে সব সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর স্বাভাবিক সময়ের চাইতে সাগরের পানি ২ থেকে ৪ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে সৈকতে আছড়ে পড়ছে।

বৈরী আবহাওয়ার এ পরিস্থিতি আগামী সপ্তাহখানেক পর্যন্ত বহাল থাকার আশংকা রয়েছে; যার প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকার পাশাপাশি মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজার সৈকতের ডায়াবেটিক থেকে কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পয়েন্ট সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙনের কবলে পড়েছে। জোয়ারের সময় উত্তাল ঢেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে আছড়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে সাগরের প্রবহমান পানি আগের অবস্থানের চাইতে উপকূলের অন্তত ৫০০ গজ কাছাকাছি সরে এসেছে। এতে সাগরের পানিতে বিলীনের হুমকির মুখে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক বেশ কিছু স্থাপনা।

সাগরে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সি-সেইফ লাইফ গার্ড কর্মীদের ইনচার্জ ওসমান গনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল। এতে উত্তাল ঢেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে তীব্র বেগে আছড়ে পড়ায় কয়েকটি পয়েন্ট প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যে টুরিস্ট পুলিশের একটি বক্স জোয়ারের পানিতে ভেসে যাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু স্থাপনাও হুমকির মুখে রয়েছে।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে সাগরের প্রবহমান পানি উপকূলের অন্তত ৫০০ গজ কাছাকাছি সরে এসেছে। এতে বালিয়াড়ি সৈকতের বিস্তৃতি সংকুচিত হওয়ায় পর্যটকদের ঘুরাঘুরির জায়গাও কমে যাচ্ছে।

ওসমান জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে উত্তাল সাগরে ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামছেন শত শত পর্যটক। সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে উড়ানো হচ্ছে লাল নিশানা (পতাকা)। পর্যটকদের গোসলে না নামতে টুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারপরও নির্দেশনা অমান্য করে পর্যটকদের অনেকে উত্তাল সাগরে গোসলে নামছেন।

টুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় জোয়ারের পানিতে লাবণীসহ সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে টুরিস্ট পুলিশের একটি বক্স। পাশাপাশি ভাঙনের কারণে বিস্তৃত সৈকত সংকুচিত হয়ে আসছে।

এ বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান পর্যটন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

এ দিকে শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের কবির বিন আনোয়ার বলেন, আপাতত ভাঙন রোধে কবলিত এলাকায় বালি ভর্তি জিওব্যাগ দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সৈকতের ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৩১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একনেকে জমা দেয়া হয়েছে। বাঁকখালী নদীর মোহনার নাজিরারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত স্থায়ী এ প্রতিরক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হবে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এ বাঁধটি নির্মিত হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় অন্য সময়ের চাইতে এ বর্ষায় সৈকতে ভাঙনের তীব্রতা বেশি। সৈকতে ভাঙনের কবলে পড়ার পরপরই জিওব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে রক্ষার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তারপরও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান এ পানি সম্পদ কর্মকর্তা।

সৈকতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান, টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *