শ্রীপুরে জমিদাতার কেউ নয় তবুও নির্বাচন ছাড়া এক যুগ ধরে একজনই সভাপতি!

Slider Video News শিক্ষা


রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর,গাজীপুর :গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের ১৬৬নং চরদমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটানা ১২ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জাহাঙ্গীর হোসেন আকন্দ নামের এক ব্যক্তি। কোন বছরই তাকে নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ বিদ্যালয়ের জমিদাতার লোকজন ও অন্যান্য এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে ওই স্কুল কমিটির দুই সদস্য’র সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন সভাপতি এখনো হয়নি। তাই পুরাতন সভাপতিই দায়িত্ব পালন করছেন।

চরদমদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন আকন্দকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে শিঘ্রই তা বাতিলের দাবি জানান জমিদাতা ও কমিটির কয়েকজন সদস্য।

এবিষয়ে সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন আকন্দের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়াই আমাকে স্কুল কমিটির সদস্যরা স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে বসিয়েছেন। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আগের সভাপতি বাতিল করে স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা{(১৬/১/২০২১ তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোঃ হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত একটি পরামর্শ নামায় বলা হয়েছেন, মাননীয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের যৌথ বেঞ্জ এই সংক্রান্ত একটি আদেশে দিয়েছেন যেখানে দুই বারের বেশী মেয়াদের একটানা কেউ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে পারবেন না} অনুসারে চরদমদমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিট গঠন হয়নি। সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুসারে দুই মেয়াদের বেশী কেউ সভাপতি হতে পারবেন না। একই সঙ্গে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ৬ মাসের মধ্যে এডহক কমিটি গঠন করে ৬মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক। ইহাতে অন্যথা হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ২০১৮ সালের সরকারী কর্মচারী(শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালাও আওতায় অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হবেন। এই ধারামতে অপরাধ প্রমানিত হলে সর্ব্বোচ্চ শাস্তি চাকুরীচ্যুতিও হতে পারে। সরকারী কর্মচারী(শঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর দুই নং ক্রমিকের ২.৮ এ, বলা হয়েছে, একই ব্যক্তি একাধিকক্রমে দুইবারের অধিক একই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না। এই ক্রমিকের ২.১০ বলা হয়েছে, ২.৮ লংঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ও সহকারীউপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, ২০১৮ সালের সরকারী কর্মচারী(শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার আওতায় অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত হবেন।

প্রসঙ্গত: ২০০৫ সালে এলাকাবাসী মিলে চরদমদমা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জমি দাতাদের সংখা প্রায় এক ডজন হলেও সর্বোচ্চ জমি দাতা ছিলেন মরহুম ডা: বরকত মোল্লাহ। গত ১৭ বছরে জামিদাতাদের কাউকে বিদ্যালয়ের সভাপতি করা হয়নি। এই সময়ে মোট ৩জন পর্যায়ক্রমে ৫বার সভাপতি হয়েছেন। পাঁচ মেয়দের মধ্যে জাহাঙ্গীর আকন্দ তৃতীয়বার সভাপতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যালয়ের অনার বোর্ডে ২০১৩ সালের পর থেকে আর কোন সভাপতির নাম পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা বলছেন, জাহাঙ্গীর আকন্দের একটি বাচ্চা এই বিদ্যালয়ে ভর্তি আছেন মর্মে তারা শুনেছেন কিন্তু জাহাঙ্গীর আকন্দ স্বপরিবারে গাজীপুর শহরে বসবাস করেন এবং তার বাচ্চা গাজীপুরেই লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার জন্য তার বাচ্চার ভর্তি দেখানো হয়েছে। স্থানেীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কারসাজিতে জাহাঙ্গীর আকন্দ বার বার সভাপতির পদে রয়েছেন। মেয়াদউত্তীর্ণ ও বে-আইনী এই কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আকন্দ আইন ও বিধি ভেঙে চতুর্থবার সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *