বঙ্গোপসাগরে পশুর এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় বেহুন্দিসহ নানা ধরনের জাল পেতে রাখার কারণে ইলিশের যাতায়াত বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নির্বিগ্নে উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে সাগর এবং নদ ও নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে গেছে। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইলিশের ওপর পড়েছে।
বিচরণ কমে যাওয়ায় জেলেরা জাল ফেললেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। ট্রলারের সক্ষমতা না থাকায় এই অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে পারে না। ফলে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের পাইকারি মাছের আড়তে ইলিশের সরবারহ অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার এবং ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, মাছের প্রজননের সময় কেবলমাত্র বাংলাদেশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সাগরে অবরোধের দাবি করেছেন সুন্দরবন অধ্যুষিত উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার জেলেরা। তবে প্রজনন বাড়াতে নদ ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পক্ষে মৎস্য বিভাগ।
অপরদিকে, জেলা মৎস্য বিভাগ এবং সুন্দরবন বিভাগ সাগর মোহনায় ইলিশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
বাগেরহাট অঞ্চলের জেলে ও ট্রলার মালিকরা বড় বড় টোলিং জাহাজ বন্ধ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অবরোধের দাবি জানিয়েছে। জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।
মৎস্য বিভাগ বলছে, সুন্দরবন মাছের অনেক বড় প্রজনন ক্ষেত্র। এজন্য গোটা সুন্দরবনের নদ-নদীতে সারা বছর জুড়ে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা গেলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
সুন্দরবন বন বিভাগ জানায়, গোটা সুন্দরবনে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হলে আগে জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার বাগেরহাট কেবি বাজার পাইকারি মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ নিয়ে কোনো ট্রলার ঘাটে ভেড়েনি। ট্রলার শূন্য আড়তের ঘাট। আড়তে ইলিশ নেই বললেই চলে। সামান্য পরিমাণ ইলিশ ছিল যা কোল্ডস্টোর থেকে আড়তে তোলা হয়েছে। তবে আড়ত জুড়ে ইলিশের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
দেলোয়ার হোসেন, আলমগীর শেখ, সুজন আলীসহ বেশ ককেজন জেলে জানান, গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরার মতো তাদের ট্রলারের সক্ষমতা নেই। এ কারণে তারা সাধারণত সাগরের মোহনা এবং সুন্দরবন থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সাগরের ভেতরে গিয়ে মাছ আহরণ করেন। জাল ফেললেও ইলিশ উঠছে না। বড় বড় টোলিং জাহাজ নির্বিচারে সাগর থেকে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যে টাকা খরচ করে তারা সাগরে যাচ্ছে তার অর্ধেক টাকার ইলিশ পাচ্ছে না।
আর ভারতীয় জেলেরা তাদের অত্যাধুনিক ট্রলার নিয়ে সাগরের বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে জেলেদের অভিযোগ।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবেদ আলী শেখ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাগরের বিভিন্ন এলাকায় চর জেগে উঠার কারণে নদ-নদীতে ইলিশ আসছে না। আর আমাদের অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে না পারায় ইলিশ পাচ্ছে না বলেই আড়তে ইলিশ আসছে না। বিগত বছর এই সময়ে প্রতিদিন আড়তে প্রায় ১০০ মণ ইলিশের সরবারহ ছিল। কিন্তু এখন মাত্র ২০ মণ ইলিশ আসছে আড়তে।
সুন্দরবন বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের মধ্যে ৪৫০টি নদী ও খাল রয়েছে। আর এসব জলধারায় ওপর ভিত্তি করে ১৬ হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গত বছর সুন্দরবন থেকে প্রায় সাড়ে ৫১ হাজার কুইন্টাল শুটকি মাছ এবং প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কুইন্টাল সাদা মাছ আহরণ করে জেলেরা। এসব মাছ থেকে চার কোটি তিন লাখ ৪৯ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে বন বিভাগ।
সূত্র : ইউএনবি