জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে একদিকে ভিড় বাড়ে রাজধানীর ফিলিং স্টেশনগুলোতে। অন্যদিকে ফাঁকা হতে থাকে সড়ক। কারণ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়ার পর পরিবহন বন্ধ করে দেয় বাস মালিকরা। ফলে রাত ১১টা থেকে সড়কে দেখা যায়নি নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচল করা সিটি বাস। হঠাৎ বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েন নগরবাসী।
শনিবার (৬ আগস্ট) রাতে রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মগবাজার, কমলাপুর রেল স্টেশন ও সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড ঘুরে এ প্রতিবেদক কোনো সিটি বাস চলতে দেখেননি। তবে নিয়ম অনুসারে ছেড়ে গেছে দূরপাল্লার বাসগুলো। সকাল থেকে ওই বাসগুলো আর ছাড়বে কি না তা নিয়ে অনেকটাই দোটানায় আছেন বাস চালক, সুপারভাইজার ও টিকিট বিক্রেতারা।
রাতে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে চালক-হেলপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজেলের দাম হুট করে যে পরিমাণ বেড়েছে, তাতে আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা বাসগুলোর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই আপাতত যাত্রী পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে।
সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার তানভীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত বাসগুলো ঠিকঠাক ছেড়ে গেছে। তবে রাতে শুনেছি ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে। কাল সকাল থেকে বাসগুলো আবার ছাড়া সম্ভব হবে কি না এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি মালিক পক্ষ থেকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি হুট করে যে পরিমাণ তেলের দাম বেড়েছে, তাতে করে শনিবার আগের ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে না। নিশ্চয়ই মালিকও চাইবে না প্রতিটি বাসে লস দিয়ে যাত্রী পরিবহন করাতে।
ঢাকা সিটিতে চলাচল করা ৬নং বাসের হেলপার মামুন বলেন, আমাদের বাসগুলো সাধারণত ১০টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। শুনেছি আজ রাত থেকে তেলের দাম বেড়েছে। এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে মনে হয় সকাল থেকে আগের ভাড়ায় বাস চলবে না।
সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চালক মাহবুব জানান, এটাই আজকের শেষ ট্রিপ। ভাড়া সমন্বয় না হলে বোধ হয় কাল থেকে বাস চলবে না।
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেসব যাত্রী রাতে রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। সিটিতে চলাচল করা কোনো বাস না পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন সিএনজি ও মোটরসাইকেলে চড়তে।
কিশোরগঞ্জ থেকে রাত ১টায় রাজধানীর সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডে এসে নামেন জাহিদ আহসান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোরগঞ্জের বাস থেকে নেমে দেখি সায়দাবাদে কোনো বাস নেই। কিন্তু অন্য সময় ঠিকই বাস থাকে। পরে জানতে পারলাম, তেলের দাম বেড়েছে। তাই বাস চালকরা ভাড়া না বাড়ানোয় আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।
বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে মধ্যরাতে কোনো পরিবহন মালিক ও নেতার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য লিটারপ্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫ টাকা ও লিটারপ্রতি পেট্রোল ১৩০ টাকা হবে।
এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ৮৬ টাকা প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছিল।