মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তের মেয়াদ বাড়ল

Slider জাতীয়


চট্টগ্রামের মিরসরাই রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। দুই কমিটিকে তদন্তের জন্য আরও সময় দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। তদন্তের মেয়াদ আরও তিন কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুর্ঘটনার পরই পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। পূর্ব রেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আরমান হোসেনকে প্রধান করে একটি এবং বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনসার আলীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। উভয় কমিটিতে চারজন করে সদস্য রাখা হয়।

রোববার থেকে কার্যক্রম শুরুর পর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার (২ আগস্ট) তদন্ত শেষ হওয়ার কথা। তবে উভয় কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের সময়সীমা আরও তিন কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কমিটিগুলো কাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী, যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা, আহত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন আছে তাদের এবং রেলসংশ্লিষ্ট লোকজনের বক্তব্য নেবে। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এরপর প্রতিবেদন দেবে। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে তদন্তের কথা বলা হয়েছে। সেজন্য তিন কার্যদিবস আরও সময় দিয়েছি। তদন্ত শেষ হলে আগামী সপ্তাহ নাগাদ প্রতিবেদন দিতে পারে।’

গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মাইক্রোবাসের এক আরোহী অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হন।

দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। তারা সবাই হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের খন্দকিয়া ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র। খন্দকিয়া যুগীরহাট এলাকার আরএনজে কোচিং সেন্টারের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চার শিক্ষক পিকনিকের উদ্দেশে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা এলাকায় গিয়েছিলেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার অধীন সীতাকুণ্ড পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে গেটম্যানের দায়িত্বে থাকা সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়।

দুর্ঘটনার পরপরই রেলওয়ে পুলিশ সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন বিকেলে সাদ্দামকে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রেল কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, রেলগেটের লাইনম্যান দুর্ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না। গেটে ব্যারিয়ারও ফেলা ছিল না। এর ফলে মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে যায়। তখন ট্রেন ধাক্কা দেয়। যদি ব্যারিয়ার ফেলা হত তাহলে মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠতে পারত না।

দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন এবং দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মসজিদ থেকে ছুটে আসেন বলেও দাবি করেছিলেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় সাদ্দাম রেলগেটে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া ও ব্যারিয়ার না ফেলার বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *