বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিভ্রাট সহসা সারবে না, অন্তত আরও তিন বছর। প্রাকৃতিক গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় এ সংকটের মুখে উন্নয়নশীল এ দেশ।
প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম চড়া হওয়ার কারণে জুন মাসে বাংলাদেশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ করে দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি দীর্ঘমেয়াদে প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করার পথ খুঁজছে। এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমনটি জানিয়েছেন। তিনি এও জানিয়েছেন, উৎপাদক দেশ কাতারসহ বিভিন্ন দেশ বলছে- ২০২৬ সালের আগে নতুন চুক্তির ভিত্তিতে তেল-গ্যাস বেচবে না তারা।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে দরকারি জ¦ালানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট বৈশি^ক রূপ নেওয়ায় এশিয়ায় এলএনজির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ইউরোপ তো মরিয়া মজুদ বাড়ানোর জন্য। ফলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলোর জন্য সরবরাহ হচ্ছে সামান্যই। এ জন্য ‘শিডিউল’
করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্তও নিতে হচ্ছে। বণিক ও বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বিকল্প বেশি না থাকায় দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিও কমে যেতে পারে।
মূল্য বাড়ায় জ্বালানি আমদানির ওপর চরমভাবে নির্ভরশীল দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো আমদানি কমে যাওয়ায় বড় বড় শহর কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখছে। [ব্লুমবার্গের কৌশলগত গবেষণা শাখা] ব্লুমবার্গএনইএফ বলছে, বাংলাদেশ এই বছর এলএনজি চাহিদার ৩০ শতাংশ আমদানি করেছে, গত বছর এ চিত্রটা ছিল ৪০ শতাংশ।
জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে ডলার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক অবস্থা মজবুত করতে আইএমএফ ও অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার কাছে সহায়তা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
ব্লুমবার্গএনইএফের গ্যাস বাজার বিশ্লেষক লুজিয়া কাও বলেছেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২৬ সাল পর্যস্ত এশিয়ার বাজারে এলএনজির চাহিদা প্রত্যাশার চেয়ে কমবে বৈকি। কারণ ক্রেতারা ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেবে। উচ্চমূল্য ও আমদানি অবকাঠামো সীমাবদ্ধতার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দেবে।’
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, এলএনজি গ্যাস আমদানি করতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলাকে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ তহবিল ঠিক কীভাবে ব্যয় হবে, পত্রিকাটি অবশ্য তা নিশ্চিত করতে পারেনি।
নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদে গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি কেনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে। এ সময় দেশটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিদ্যমান চুক্তি মোতাবেক জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভর করবে।