দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিত্ব হারানো তৃণমূল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশে অর্থপাচার করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান দৈনিক আনন্দবাজার শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এ তথ্য।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই ফ্ল্যাটে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওয়া এবং ভারতের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) সূত্র উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে অর্থ পাচারের সম্ভাবনার খবর প্রকাশের পর টনক নড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার। এ বিষয়ে বাংলাদেশে প্রাথমিক তদন্তও শুরু হয়েছে।
ইডির সূত্রে জানা গেছে, পার্থের টাকার একটা অংশ হাওয়ালার মাধ্যমে কয়েক দফায় বাংলাদেশে গিয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। সেই টাকার একাংশ দিয়ে বাংলাদেশে বেনামে জমি-বাড়ি কেনা হয়েছে বলেও তাঁরা সূত্র পাচ্ছেন। বাকি অংশ তৃতীয় কোনও দেশে চালান হতে পারে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশে পার্থের প্রভাব বলয়কে খতিয়ে দেখে পশ্চিমবঙ্গের এই প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা চিহ্নিত করেছেন, যারা তার স্বার্থে কাজ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই তালিকায় যেমন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ বলে পরিচয় দেওয়া প্রাক্তন এক সেনাকর্তাও রয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আনন্দবাজারকে জানান, পার্থের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে প্রথম দফায় উদ্ধার হওয়া টাকার যে ছবি প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেই ‘বাংলাদেশ যোগ’র বিষয়টি তাদের নজরে আসে। ডাঁই করা নোটের মধ্যে একটি সাদা ব্যাগ ছিল, যার গায়ে কালো রঙে আঁকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। টাকা যে ভাবে শক্তপোক্ত খামে ভরে ‘স্কচ টেপ’ দিয়ে প্যাক করা ছিল, তা যে সচরাচর বেআইনিভাবে পাচারের জন্য করা হয়, সেটিও গোয়েন্দারা বুঝেছেন।
বস্তুত প্রথম দিন থেকেই পার্থের বাংলাদেশ যোগের তদন্ত শুরু করে দেন বাংলাদেশি গোয়েন্দারা। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আসার কথা। প্রধানত দিল্লিতে তার কর্মসূচি থাকলেও কলকাতার বেশ কয়েকটি সংগঠন একই সফরে কলকাতা ঘুরে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে। তার অব্যবহিত আগে পার্থের এই কেলেঙ্কারির বাংলাদেশ যোগ কতটা গভীরে প্রোথিত, সেটিও দেখে নিতে চান বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।
ইডি-সূত্রের ভাষ্য— আদতে কুমিল্লার লোক পার্থের এই সব যোগাযোগ এবং ‘অর্থের সম্ভাব্য গতিপথ ও বিনিয়োগ’ বাংলাদেশের গোয়েন্দারা যেন খতিয়ে দেখেন, সেজন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি দিয়েছেন তারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে সে চিঠি শুক্রবার পর্যন্ত হাতে পাননি বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্র। তবে তারা আগেই এই তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, গত রাজ্যসরকারের মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে পার্থের এক বান্ধবী (অর্পিতা নন) নিয়মিত বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন; যা পরে সে দেশে অর্থ বিনিয়োগে কাজে লাগানো হয়েছে। এই বান্ধবী বাংলাদেশে পার্থের জমি-বাড়ি দেখাশোনা করতেন বলেও দাবি করেছে ইডির সূত্র।
প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জেনেছেন, দেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের সঙ্গে ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠতা’ তৈরি করে তাকে ব্যবহার করেছেন ওই বান্ধবী। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের হাত ধরেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছে গেছেন তিনি।
বাংলাদেশের গোয়েন্দারা আশা করছেন, চিঠির পাশাপাশি কিছু সুনির্দিষ্ট সূত্রও দেবেন ভারতীয় তদন্তকারীরা, যা তাদের তদন্তে সহায়ক হবে।