টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। সাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারেও। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশের সরবরাহ ও বিক্রি দুটিই বেড়েছে। আগামীতে দাম আরও কমবে বলে আশাবাদী ক্রেতারা। তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক বিক্রেতা নদীর ইলিশ বলে বেশি দামে সাগরের ইলিশ গছিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। এতে ইলিশ কিনে স্বাদে ঠকছেন অনেক ক্রেতা।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গতকাল শুক্রবার এক হাজার ১০০ টাকা দরে এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. আশরাফ আলী। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে এ ইলিশের দাম চেয়েছিল ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এখন দাম অনেকটাই কম। তাই কিনে নিলাম। আরেক ক্রেতা মো. ওবায়দুল হোসেন বলেন, বাজার ইলিশে ভরা। বেশিরভাগই সাগরের। কিন্তু বিক্রেতারা সব ইলিশকেই বলছেন নদীর ইলিশ, চাঁদপুরের ইলিশ। কেউ বলছেন না যে- এটা সাগরের, ওটা নদীর। সাগরের ইলিশেরও স্বাদ আছে। কিন্তু বেশি দামের লোভে তারা সাগরের ইলিশকেই নদীর বলে বিক্রি করছেন। এতে যেসব ক্রেতা ইলিশ চেনেন না, তারা বাড়তি টাকা খরচ করে ঠকছেন।
কারওয়ানবাজারের ইলিশের খুচরা বিক্রেতা স্বপন চন্দ্রের কাছে জানতে চাইলে তিনিও স্বীকার করেন, অনেক বিক্রেতা সাগরের ইলিশকেও নদীর ইলিশ বলে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, নদীর ইলিশ এখনো সেভাবে ওঠেনি। বাজারে সাগরের ইলিশই বেশি। এগুলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে এসেছে। এগুলোরও স্বাদ আছে। তবে নদীর ইলিশের স্বাদটা বেশি জনপ্রিয়। লাইনের ইলিশের (নদীর ইলিশ) দাম একটু বেশি হয়ে থাকে। তাই অনেক ব্যবসায়ী সাগরের ইলিশকেও নদীর ইলিশ বলে বিক্রি করছেন। এটা ঠিক নয়।
সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অনেক কমেছে উল্লেখ করে এ ইলিশ বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম কম রয়েছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ এখন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। এর থেকে ছোট ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের বড় ইলিশ কিনতে খরচ পড়ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত।
যাত্রাবাড়ী মাছের পাইকারি বাজারের সততা আড়তের ব্যবসায়ী মো. মোজাম্মেল বলেন, গত সপ্তাহে বাজারে সাগরের ইলিশের আধিক্য থাকলেও এ সপ্তাহে নদীর ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। প্রতিদিন জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। অল্প সময়ে সরবরাহ অনেকখানি বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। আগামীতে সরবরাহ আরও বাড়বে। দামও কমবে।
ইলিশের পরিচয় নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, বেপারিরা ভালো দাম পাওয়ার আশায় নোয়াখালীসহ আশপাশের এলাকার ইলিশও চাঁদপুরের হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। সে ইলিশ যখন ঢাকায় আসে তখন তা হয়ে যায় চাঁদপুরের ইলিশ। এখন কাগজে কলমে তো সেটা চাঁদপুরের ইলিশই! এভাবেই চলছে।