অধিকারের প্রতিবেদন : ৬ মাসে ২৪০টি হত্যাকান্ড

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা নারী ও শিশু সারাদেশ সারাবিশ্ব

51024_odikar logo
গ্রাম বাংলা ডেস্ক:
গত ছয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে ১০৮ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গড়ে প্রতি মাসে ১৮ জন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের এক ষান্মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অধিকারের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- গত ছয় মাসে দেশে ১০৮ বিচারবর্হির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ক্রসফায়ারে ৬৬ জন। এদের মধ্যে ৩৯ জন পুলিশের হাতে, ১৪ জন র‌্যাবের হাতে, যৌথ বাহিনীর হাতে ৮ জন। র‌্যাব-বিজিবি’র হাতে দুইজন ও কোষ্টগার্ডেও হাতে নিহত হয়েছে তিনজন। নির্যাতনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৬ এবং র‌্যাবের হাতে ১জন। ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এদেও মধ্যে পুলিশের গুলিত ২০ জন, র‌্যাবের গুলিতে ৪ জন, বিজিবি’র গুলিতে ২ জন, যৌথ বাহিনীর গুলিতে ৩ জন ও সেনা সদস্যের হাতে ১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে। গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।
এছাড়াও প্রতিবেদনে হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক এবং মর্যাদাহানিকর আচরণ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩২ জন নিহতের কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাচন ২০১৪, নারায়ণগঞ্জের-৫ আসনের উপনির্বাচন, মিরপুরে বিহারী ক্যাম্পে হামলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা, সভা-সমাবেশে হামলা ও নিষেধাজ্ঞা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সংগঠন ও মত প্রকাশের ব্যাপাওে সরকারের নেতিবাচক মনোভাব, বাংলাদেশ-ভারত ও নিয়ানমার সম্পর্ক, শ্রমিক অধিকার ও নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা কর হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ৬৬ জন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ২০জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৩, মার্চে ৭, এপ্রিলে ১৪, মে মাসে ৫ ও জুনে ৭ জন নিহত হয়েছে। নির্যাতনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ২জন, মার্চে ১জন, মে মাসে ২জন ও জুনে ২ জন। গুলিতে নিহত হয়েছে ৩০ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৮, ফেব্রুয়ারিতে ১ জন, মার্চে ৬ জন, এপ্রিলে ৪জন এবং মে মাসে ১ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৫ জনকে। এর মধ্যে এপ্রিল মাস বাদে প্রতিমাসে একজন করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া গত ছয় মাসে ২৮ জন গুম হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭, মার্চে ২ এবং এপ্রিল মাসে ১৮ জন গুম হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে জেল হেফাজতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩২জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে ৫২২৪জন। এদের মধ্যে জনুয়ারিতে নিহত হয়েছে ৫৩জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০জন, মার্চে ২২জন, এপ্রিলে ১৭ জন, মে মাসে ১৭জন, জুনে ১৩জন।
যৌতুক সহিংসতার ব্যপারে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছে ১১১ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৮৯জন। যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে ১১৪জন। এছাড়া গত ছয় মাসে গণপিটুনীতে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিএসএফ কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্খনের ব্যপারে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে বিএসএফের হাতে ১৪ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২৩ জন এবং অপহৃত হয়েছে ৫৯ জন।
সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণের ব্যপারে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এতে বলা হয় গত ছয় মাসে এক জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে ৫০ জন। হুমকির সম্মুখীন হয়েছে ৯জন। ১৮ জন লাঞ্ছিত হয়েছে এবং ৫জন গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া গত ছয় মাসে তৈরি পোশাক শিল্পে ৪৭৫জন শ্রমিক আহত হয়েছে।
এসব ঘটনায় অধিকার তার প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে- সরকারকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই নির্যাতন বিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপসোনাল প্রোটোকল অনুমোদন করতে হবে। আইন শৃংখলা রাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক এবং নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করতে হবে এবং এই ব্যাপারে সরকারকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। অধিকার অবিলম্বে নিঁেখাজ হওয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ডিসেম্বর ২০, ২০০৬ গৃহীত সনদ ‘ইনটারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রোটেকশন অফ অল পারসনস্ ফ্রম এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেনস্’ অনুমোদন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া, আইন শৃংখলা রাকারী বাহিনীর সদস্যদের সব কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদেও দায়মুক্তি রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দুর্বৃত্তায়ন বন্ধের জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সহিংসতা ও দুর্বৃত্তায়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সহিংসতা বন্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে এসে সμিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে মিরপুরের উর্দুভাষী ক্যাম্পে বসবাসকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি নিরেপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং এই ঘটনায় জড়িতদেও গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখিন করতে হবে।
সমাজের অন্যান্য নাগরিকদের তুলনায় যেসব নাগরিক তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কারণে সংখ্যালঘু,তাদের
জানমালের সুরক্ষা দিতে হবে এবং তাঁদের ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে তাঁদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *