বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত হলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত মো. বুলবুল আহমেদ (২২)। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ নরসিংদীর সদর উপজেলার চিনিশপুরের নন্দীপাড়া গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
এর আগে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে প্রথম দফা জানাজার পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী-কালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় বুলবুল ছুরিকাহত হন। পরে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে বাড়িটিতে এসেছেন স্বজন, এলাকাবাসী, সহপাঠীসহ শতাধিক মানুষ।
নিহত বুলবুলের মরদেহ নরসিংদীর ভেলানগরে এসে পৌঁছালে স্বজন, এলাকাবাসী ও সহপাঠীদের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি হয়। বাড়িটিতে ঢোকার রাস্তা সরু গলি হওয়ায় মরদেহ বাড়িতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন ভেলানগরের মাইক্রোস্ট্যান্ডে দ্বিতীয় দফা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। পরে তার মরদেহ দাফনের জন্য মাধবদীর খড়িয়া এলাকায় রওনা হন স্বজনরা। সেখানে তার বাবার কবরের পাশে মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত বুলবুল নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে। বুলবুল চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। বাবা ওয়াহাব মিয়া আট মাস আগে মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিবারটির আশা-ভরসা ছিলেন বুলবুল।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে জেএসসি পাস করেন বুলবুল। এরপর শহরের সাটিরপাড়া কে কে ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। মেধাবী ছাত্র হওয়ায় বেশ কয়েকটি বৃত্তি চলমান ছিল তার। একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ১২ হাজার টাকা, আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ মাস অন্তর ১৫ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬ হাজার টাকা করে বৃত্তি পেয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পরিবারটির স্বপ্ন ছিল, বুলবুল একজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে।
মা ইয়াসমিন বেগম বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কোনো ছিনতাইকারী আমার ছেলেকে হত্যা করেনি। বরং হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনাকে অন্যদিকে ধাবিত করতে এসব বলা হচ্ছে। যে মেয়ে ঘটনার সময় তার সঙ্গে ছিল, সে হয়তো সব বলতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই দাবি, আমার হীরার টুকরা ছেলেকে যে বা যারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে নিহত বুলবুলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে কলেজ জীবনের সহপাঠী ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করে। এদিন বিকেল ৪টার দিকে ভেলানগর বাজার সংলগ্ন সড়কে আয়োজিত এই মানববন্ধনে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা বুলবুলকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করেন।