আজ রাত থেকেই সাগরে মাছের রাজা ধরা শুরু

Slider জাতীয়


মোংলা (বাগেরহাট): বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকেই সাগরে যাবেন মোংলা উপজেলার জেলেরা। ইতোমধ্যে সাগরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলোতে। রাত ১২টার পর থেকেই মাছ ধরে ফের সাগরে যাওয়া শুরু করেছেন উপকূলের জেলেরা।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, মোংলা উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ৬৫৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। যাদের অধিকাংশই সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরছে জেলেদের মধ্যে। দীর্ঘদিন সাগরে মাছ না ধরায় জেলেদের জালে বিপুল মাছ ধরা পড়ার আশা করছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে অনেকেই এখন বরফ নেওয়ার জন্য ট্রলার নিয়ে খালে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ ট্রলার মেরামত শেষে এখন রঙের কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ জাল বুনছেন, কেউ কেউ ট্রলারে জাল, কন্টেইনার ও গ্রাফিসহ মালামাল উঠাচ্ছেন। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে নামার আগে তাই জেলেদের চোখে-মুখে নতুন আশা, জালে ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

তবে মৌসুমের শেষ ভাগে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে নারাজ অনেক আড়ৎদার ও জেলেরা। এদিকে বরফ কল মালিকরা জানিয়েছেন, বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ানসহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুনতে হয়। মৌসুমের চার মাসে তারা আয় করে তা পুষিয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে দুই মাসেরও বেশি সময় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই বরফ কল চালু করতে চাচ্ছেন না।

স্থানীয় জেলে মোহাম্মদ কবির বলেন, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগরে যেতে পারিনি। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে। সাগরে যেতে পারবো বলে খুশি লাগছে।

আরেক জেলে মো. রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন নৌকা ডাঙায় পড়ে থাকায় ভাঙন ধরেছে। সেগুলো মেরামত করে সাগরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।

মো. আলম, এমাদুল, রিয়াজসহ একাধিক জেলে বলেন, ট্রলার মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। গত রাতেই বাজার করেছি। আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তাছাড়া সবগুলো ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে যেতে এখন প্রস্তুত রয়েছে।

তারা আরও বলেন, মাঝারি কিংবা বড় সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত আমরা।

মালিক ও আড়তদাররা বলেন, প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু করোনাসহ মৌসুমের শেষভাগে বিপুল টাকা বিনিয়োগে অনেকেরই অনীহা। এছাড়াও মাত্র দুই মাস পরই ফের মা-ইলিশের ২২ দিনের জন্য সাগর এবং নদীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মৎস্যজীবী সমিতি ও ট্রলার মালিক সমিতি বলছে, এই মোংলার জেলেরা ৬৫ দিনের সরকারি নির্দেশনা পালন করেছে। নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো ট্রলার সাগরে যেতে দেওয়া হয়নি। তাই রাত ১২ টার পরপরই জেলেরা গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যাচ্ছেন।

মোংলা সহকারী মৎস কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান বলেন, ইলিশসহ অন্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে সাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার। ২৩ জুলাই শেষ হচ্ছে। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহণ ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। যদিও বা ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলো ২০১১ সাল থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে। তবে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *