এবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করা হলো অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। প্রায় ২৯ ঘণ্টা জেরার পর শনিবার (২৩ জুলাই) তাকে গ্রেফতার দেখাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি। এর আগে টালিগঞ্জে তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় ২১ কোটি নগদ টাকা এবং প্রায় ৫৭ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় দিনভর তল্লাশি শেষে বড়সড় সাফল্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডির। শুক্রবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার একটি ফ্ল্যাট থেকে বস্তায় বস্তায় টাকা উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা।
উদ্ধার হয়েছে ২০ টি মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক নারীর ফ্ল্যাট থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে গোয়েন্দা সূত্র দাবি করছে।
গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করছে জব্দকৃত অর্থ সরাসরি শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি প্রমাণ করছে। টাকাগুলো শিক্ষক নিয়োগের সময়ে নেয়া হয়েছে বলেও দাবি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সাংসদ চিকিৎসক নেতা ডাক্তার শান্তনু সেন দাবি করেন যেহেতু বিষয়টি তদন্ত চলছে, তাই দলীয়ভাবে তারা কিছু বলতে পারবেন না। তবে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে মমতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী এবং কেবিনেটের সিনিয়র মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৫ ঘণ্টা জেরা শেষে শনিবার (২৩ জুলাই) তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব এবং পঞ্চায়েত বিষয়ক এ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এক সংবাদ সম্মেলনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের দলগত অবস্থানের কথা বলতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। এডির তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে ঢালাও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছিল ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং তার সহযোগী ইডি। এ ঘটনায় শুক্রবার কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একযোগে তল্লাশি অভিযান শুরু করে কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা। রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মমতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ঢালাও দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা হলে মামলার তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। এর আগে বেশ কয়েক দফায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বর্তমান প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে দফতরে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেন গোয়েন্দারা। এবার সরাসরি তাদের বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশি অভিযানে নামল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। হাইকোর্টের নির্দেশে এর আগে শিক্ষা দফতরের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এদিকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অভিযান বিজেপির বিরুদ্ধেই সুর চওড়া করেছে তৃণমূল। রাজ্যটির প্রভাবশালী মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ২১ জুলাই মঞ্চ থেকে ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের মধ্যদিয়ে দেশ থেকে বিজেপিকে বিতাড়নের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ডাক শুনে মোদি ভয় পেয়ে গেছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বলে কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই তারা সিবিআই ও ইডির গোয়েন্দাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন।
এদিকে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মমতার প্রশাসনের শতভাগ মন্ত্রী এবং আমলা দুর্নীতিগ্রস্ত। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলেছে তৃণমূল। তাই প্রয়োজনে মন্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।