দৃপ্তকণ্ঠে সবসময় উচ্চারিত হয়েছে গীত, হয়েছে গণমানুষের কথা। সংগীত ছিল তার মাধ্যম। তীব্র-তির্যক শব্দমালাকে সুরে সুরে বেঁধে দিয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের জেগে থাকা স্বপ্নে।
একাত্তর যখন এলো, তিনি তখনো সংগীতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী। নিরস্ত্র বাঙালির মনে সংগীত তখন শক্তি জুগিয়েছে। তবে, একাত্তরের পরও তার কণ্ঠ ছিল বিরামহীন।
সংগীতাঙ্গনে অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পান ফকির আলমগীর। এ ছাড়া শেরেবাংলা পদক, ভাসানী পদক, জসীমউদ্দীন স্বর্ণপদকও অর্জন করেছেন এই গুণী শিল্পী। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলা পপ গানের বিকাশেও তার রয়েছে বিশেষ অবদান। বিশেষ করে তার দরাজ কণ্ঠে ‘ও সখিনা’, ‘চল সখিনা দুবাই যাব’, ‘মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’, ‘বনমালী তুমি’ এমন আরও অসংখ্য গান গেয়ে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে এই শিল্পী তার তার গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের সামরিক শাসনবিরোধী গণ-আন্দোলনে তিনি তার গান নিয়ে শামিল হয়েছেন, মিশে গেছেন দর্শক অন্তরে।
করোনায় হারানোর তালিকায় যুক্ত হয় এই গুণী তারকার নামও। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের আজকের দিনে না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই সংগীতশিল্পী। ২৩ জুলাই অর্থাৎ আজ ফকির আলমগীরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
পরিবার, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী ও বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা ভরে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। ফকির আলমগীরের গাওয়া গানের সংখ্যা অগণিত। সেই অসংখ্য গানের মধ্য থেকে কিছু গান জয় করে নিয়েছে প্রজন্ম ও কালের সীমানা। আর সেসব গানের মাঝেই ফকির আলমগীর বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।