রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলায় মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি খারিজ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। শুক্রবার (২২ জুলাই) দ্য হেগ শহরে আদালত এই রায় দিয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার মূল মামলার পরিপূর্ণ শুনানির পথ তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।
মিয়ানমারের যুক্তি ছিল, আইনগত কারণেই আদালতের উচিত মামলাটি খারিজ করে দেয়া। মামলাটি এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘের আদালতে গাম্বিয়া এই মামলা করতে পারে না। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) প্রতিনিধি হিসেবে মুসলিম অধ্যুষিত গাম্বিয়া মামলাটি করেছে। যে কারণে এই মামলা এগিয়ে নেওয়ার এখতিয়ার আইসিজের নেই।
জান্তা বাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর মামলার শুনানি প্রশ্নে তাদের প্রাথমিক আপত্তি জানায়। গত ২১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির ওপর শুনানি শুরু হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট চার দিন আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি পাল্টাযুক্তি শোনেন।
সভাপতিত্বকারী বিচারক জোয়ান দোঙ্গু বলেন, ১৩ সদস্যের বিচারক প্যানেল দেখেছে যে, ১৯৪৮ গণহত্যা কনভেনশনে সই করা যে কোনো দেশ এই মামলা করতে পারে। গণহত্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে তাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর মামলা এগিয়ে নেয়ার অধিকারও আদালতের রয়েছে।
মামলার শুনানির সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, গণহত্যা কনভেশনের সদস্য হিসেবে গাম্বিয়া এই মামলা করতে পারে। মামলার যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে আদালত মামলা এগিয়ে নিতে পারে।
যদিও এই প্রক্রিয়া শেষ হতে বহু বছর লেগে যেতে পারে। গাম্বিয়ার তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন শেষে জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি বলছে, ১৯৪৮ গণহত্যা কনভেনশন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পৃথিবীর প্রতিটি দেশের। গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে ৫৭ সদস্যের ওআইসি।
ভবিষ্যতে যাতে মিয়ানমারে কোনো গণহত্যা সংঘটিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ও জান্তাশাসিত দেশটিকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে এই মামলা করা হয়েছে বলে দাবি গাম্বিয়ার।
জাতিসংঘের একটি তথ্য-অনুসন্ধানী মিশন বলছে, ২১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তখন তাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ধর্ষণ, নিপীড়নসহ গণহত্যা চালিয়েছে।