রাজশাহীতে শিক্ষককে মারধর, নড়াইলে শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও সাভারে শিক্ষককে হত্যার রেশ কাটতে না-কাটতেই খুলনার কয়রা উপজেলায় একটি মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
গত সোমবার (১৮ জুলাই) উত্তরচক আমিনীয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় কয়রা উত্তরচক আমিনীয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি কয়রা থানায় গত মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় এজাহার দিলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে মীমাংসার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই অধ্যক্ষ।
মাসুদুর রহমান জানান, গত সোমবার মাদরাসায় কাজ করছিলেন। এ সময় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় ইউনুসুর রহমান, নিয়াজ হোসেন, মাসুদুর রহমান, মিলন হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রিয়াল, আমিরুল, অমিত মণ্ডল, রফিকুল গাজী ও সাদিকসহ ১৫ থেকে ২০ জন লোক তাকে জোর করে ধরে রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তফা আবদুল মালেকের উপস্থিতিতে বাহারুল আমাকে গালাগাল করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা আমাকে ফেলে দিয়ে বেদম মারপিট করে। এরপর সেখান থেকে তুলে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখে। সেখানেও বেদম মারপিট করা হয়। এতে আমার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কানের পর্দা ফেটে যায়। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
তিনি আরও বলেন, জ্ঞান ফিরলে চেয়ারম্যান আমাকে মাদরাসা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। পরে কয়রা থানার এসআই মনিরুল ইসলাম আমাকে উদ্ধার করে। প্রথমে আমাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
অধ্যক্ষ জানান, তার মাদরাসাটি ঢাকার ইসলামিক অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটির আওতাভুক্ত। তিন মাস আগে কলেজে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজনের নাম চাওয়া হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান বাহারুল তাকে জোর করেছিল তার নাম দেওয়ার জন্য। বাধ্য হয়ে বাহারুলসহ তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। তবে ইউনিভার্সিটি থেকে সেটা রিজেক্ট করে নতুন করে কমিটি দিতে বলা হয়েছিল। পরে আমি মহারাজপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ তিনজনের নাম প্রস্তাব করে আরেকটি কমিটি জমা দিই। তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়।
অধ্যক্ষ বলেন, এরপর থেকেই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আমাকে নানান হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। কয়েক দিন আগে আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। বলেছেন, সভাপতি হতে পারিনি, তখন আমার কিছু টাকা খরচ হয়েছিল। সেইজন্য এক লাখ টাকা দিতে হবে। প্রাণের ভয়ে টাকা দিয়েছি।
তারপরও সে আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। বলেছে, অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে, নাহলে এলাকায় ফিরতে পারব না। থানায় জানালেও মামলা না নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করতে বলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে অভিযোগ দিয়েছিলেন। তখন পড়ে দেখি সেটা ক্রিমিনাল অকারেন্স। তাই তাকে মামলা করতে বলা হয়েছে। মামলা না নিলে তাকে পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। এ ধরনের কিছু জানি না। অধ্যক্ষ থানায় কোনো এজাহার জমা দেয়নি।
বিষয়টি খুলনা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসানকে জানালে তিনি বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে কয়রা থানাকে মামলা নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন মোস্তফা আবদুল মালেক। তিনি অবসরে যাওয়ার পরে মাদরাসার সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সভাপতি না হতে পেরে, আমাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষকরা ক্লাস ঠিকমতো করে না, বাইরে ঘুরে বেড়ান। তারা দেখলেন, আমি যদি সভাপতি হই তবে সমস্যা, আমি নিয়ম কড়াকড়ি করি। আমার সঙ্গে মহারাজপুরের চেয়ারম্যানের একটু সমস্যা আছে। তারা সেই চেয়ারম্যানকে এনে আমার ইউনিয়েন মাদরাসার সভাপতি বানিয়েছে। এই নিয়ে একটু বিরোধ আছে।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের লোকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের ঠেলাঠেলি হয়েছিল। পরে তারা অধ্যক্ষকে আমার কার্যালয়ে এনেছিলেন। তখন আমি তার স্ত্রীকে খবর দিই। সে (অধ্যক্ষ) আমাকে একটা লিখিত দেয়। এরপর তাকে আমরা নিয়ে যাই। এটা আমরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করব।
তারপরে নানান রকমের অভিযোগ শুনতে পারি। আমি মারধরের কোনো ঘটনায় জড়িত নই। তিনি যদি এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারে, তবে আমি দোষী।