কুষ্টিয়ায় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান ওরফে রুবেল নিখোঁজ ও হত্যার ১৬ দিন পর জেলা পুলিশ সুপার সুপার খাইরুল আলম (এসপি) সরাসরি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন কর্মসূচি চলার পর মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এ সময় পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আশ্বাস দেন, দ্রুতই এ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে করা হবে।
সাংবাদিক হাসিবুর হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে কুষ্টিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও এসপির কার্যালয় ঘেরাওসহ বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। সোমবার (১৮ জুলাই) শহরের পাঁচ রাস্তা মোড় এলাকায় বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে হাসিবুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিকেরা।
গত রোববার (১৭ জুলাই) আমরণ অনশনেরও ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা। এ সব কর্মসূচির মধ্যে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এসপি খাইরুল আলম তার কার্যালয়ে আন্দোলনরত সাংবাদিকদের ডেকে বৈঠক করেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, সাংবাদিক নূর আলম দুলাল, হাসান আলী, সোহেল রানা, গোলাম মওলা, শরীফ বিশ্বাস, এস এম জুবায়েদ রিপন, এস এম রাশেদ, তৌহিদী হাসান প্রমুখ।
দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠকে এসপির সঙ্গে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসপি খাইরুল আলম বৈঠকে বলেন, হাসিবুরের লাশ গড়াই নদে উদ্ধার হওয়ায় মামলাটি নৌ পুলিশ তদন্ত করছে। কিন্তু জেলা পুলিশ ছায়া তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন খানের নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা রাত দিন ২৪ ঘণ্টা এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করছেন। তারা বেশ কয়েকটি সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। সূত্র ধরে অনেক দূর আগানো হয়েছে। শিগগিরই জড়িত ব্যক্তিদের ধরা সম্ভব হবে। তবে এ সময়ের মধ্যে যেন পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাবা না হয়। এ হত্যা মামলা নিয়ে এখন থেকে সাংবাদিকদের হালনাগাদ তথ্য জানানো হবে বলে জানান এসপি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, হাসিবুর সাতটি মুঠোফোন সিম ব্যবহার করতেন। এসব সিমের মাধ্যমে বেশ কিছু টাকা অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে হাসিবুর বেশির ভাগ সময় সিম বাদে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতেন।
পুলিশ সুপার বলেন, গত ৩ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সর্বশেষ কুমারখালী জয়নাবাদ এলাকায় গড়াই নদের পাশ থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন রাত নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে পত্রিকা অফিসে ছিলেন হাসিবুর। তখন মুঠোফোনে একটি কল পেয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার।
তিনি বলেন, নিখোঁজের চার দিন পর ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় গড়াই নদে নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে হাসিবুরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জুলাই রাতে হাসিবুর রহমানের চাচা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।