আষাঢ় শেষে আজ ৩ শ্রাবণ। এরপরও বৃষ্টি নেই রাজশাহীতে। ফলে প্রচণ্ড গরমে জেলায় বেড়েছে সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ। এর প্রভাব পড়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের।
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে শয্যা সংকটও। ফলে ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেক রোগী বারান্দার মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকায় গরমে কাহিল হচ্ছেন রোগীরা।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈরী আবহাওয়া ও অসচেতনতার কারণে রাজশাহীতে ডায়রিয়াসহ সর্দি-কাশি ও জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। চলতি মাসের গত ১৭ দিনে হাসপাতালে ১ হাজার ৩৭২ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ জুলাই হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৪৫ শিশুসহ ১৩০ জন রোগী ভর্তি ছিল।
সোমবার (১৮ জুলাই) রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের আলাদা করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিশুদের কেউ কেউ কয়েকদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে না আসায় বেশ কয়েকদিন ধরেই সন্তানদের নিয়ে বাবা-মা হাসপাতালে বেডে কিংবা মেঝেতে অবস্থান করছেন।
১২ জুলাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১ মাস বয়সী ছেলে স্যামুয়েল বিশ্বাসকে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হন নগরীর শাহমখদুম থানার সন্তোশপুর এলাকার বাসিন্দা নাগরী বিশ্বাস। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাত দিন ধরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে অবস্থান করছি। কিন্তু ডায়রিয়া ভালো হচ্ছে না। বর্তমানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া রোগীরা সুস্থ হতে সময় লাগছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জনিয়েছে।’
তিন দিন আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মোহনপুর উপজেলার ধোপাঘাটা এলাকার নুপুর খাতুন তার চার বছরের শিশু লামিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু ডায়রিয়া কমে এলেও বর্তমানে তার শিশু আমাশয়ে আক্রান্ত হয়েছে। এমনিভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীই আক্রান্তের পর দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন।
রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা এলাকার এক নারী তার তিন মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে চারদিন ধরে শিশু ওয়ার্ডে আছেন। তিনি জানান, ছেলের শরীরে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। সঙ্গে সর্দি-কাশিও রয়েছে।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মোহাইমেনুল হক আতিক বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে রাজশাহী অঞ্চলে শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর অধিকাংশ শিশু রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডায়রিয়া থেকে শিশুরা দ্রুত সুস্থ হয় না। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ শিশুর এমন অবস্থা (সুস্থ হতে সময় লাগছে)।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন থেকে (চলতি মাসে) তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করছে। ফলে তীব্র গরমে শিশু কিংবা বয়স্কদের ডি-হাইড্রেশন ও সান স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই এ গরমে সবাইকে নিয়মিত ব্লাড প্রেশার চেক করার পাশাপাশি মাংস খাওয়ার পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দিয়ে ফল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত।’
এদিকে, রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী অধিক পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ফলে ওজন স্তর ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাব রাজশাহীতেও পড়েছে। এজন্য বর্ষা মৌসুমেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক গাওসুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চলতি মাসের ১৪ জুলাই সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর পরের দিন ১৫ জুলাই তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ জুলাই ও ১৭ জুলাই রাজশাহীতে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও সোমবার (১৮ জুলাই) তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
রামেক হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘তীব্র গরমে রাজশাহী অঞ্চলে ডায়রিয়াসহ মৌসুমী রোগের প্রকোপ একটু বেড়েছে। অনেক সময় কোনো রোগ মহামারি আকারে দেখা দিলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী রোগীদের জায়গা দিতে পারি না। তবে ডায়রিয়া রোগী বর্তমানে যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে চিকিৎসাসেবা দিতে খুব বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে না। ডায়রিয়ার প্রকোপ আও বেড়ে গেলেও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করছি, চিকিৎসা সেবা দিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।’