ত্যাগ আর মহিমার ঈদ কোরবানির ঈদ। প্রত্যেকটি পরিবারই চায় ঈদের খুশি সকলের সঙ্গে ভাগাভাগি করে কাটাতে। তবে ঈদের আনন্দের ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের অসহায় ও দুস্থ মানুষের জীবনে। একে তো অভাবের তাড়না, তার ওপর বন্যায় কেড়ে নিয়েছে সবকিছু। তাই এবারের ঈদের আনন্দটুকুও সেখানে পৌঁছায়নি। এ বছর বন্যায় বিধস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ঈদের আনন্দ তো দূরে কথা, সন্তানদের মুখে এক টুকরো কোরবানির মাংস তুলে দিতে পারেননি দক্ষিণ ভগপতিপুর গ্রামের প্রায় ১৫০টি পরিবারের মানুষজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ ভগবতীপুর গ্রামের চারদিকে থইথই পানি। অগোছালো কয়েকটি বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে পানির ওপর। নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নেই এই গ্রামে। আর সেখানেই রয়েছে ১৫০টি পরিবারের আশ্রয়ের ঠিকানা ও একটি গুচ্ছগ্রাম। ওই গ্রামটিতে কোনো নৌকা ভিড়লেই ছুটে আসছে গ্রামটির শিশু-কিশোর-বৃদ্ধরা। তারা হয়তো ভাবছে কেউ ত্রাণ নিয়ে এসেছে। ঈদের খুশি নেই তাদের মনে,চোখেমুখে যেন হতাশার ছাপ। ঈদ যেন তাদের জীবন থেকে পালিয়ে গেছে।
অন্যান্যবার ঈদের আগ থেকে প্রস্তুতি থাকলেও এবারের বন্যায় ঈদ তাদের কাছে ফিকে হয়ে গেছে। যেখানে ঈদের দিন সকালে সেমাই খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি, সেখানে কোরবানির মাংস তো তাদের কাছে দুষ্প্রাপ্য।
দক্ষিণ ভগপতিপুর চরের বাসিন্দা আবুল কালাম শেখ বলেন, ‘আমাদের এই এলাকা একদমই হতদরিদ্র। এই এলাকায় কোরবানি যে কী জিনিস, গত কয়েক বছর শুনি নাই। এবারের ঈদে এখানকার মানুষ কোরবানির মাংস খাইছে কি না আমি জানি না। তবে ধারণা করছি কেউ খেতে পারেনি। শুনেছি অন্যান্য এলাকায় বেসরকারিভাবে কোরবানির গরু দেওয়া হয়েছে। এই গ্রামে কেউ গরু দেয় নাই, কোরবানিও হয় নাই।’
একই গ্রামের বাসিন্দা ছালেয়া বেগম বলেন, ‘বন্যায় বাড়ি-ঘর ভেসে যাওয়ায় আমরা এই গ্রামে এসে আশ্রয় নিয়েছি। পানির জন্য এখন কোনো কামাই-রোজগার নাই। আমাদের কোনো জমি নাই। বাড়ির লোকজন নদীতে মাছ ধরে, ওইসব দিয়ে কোনোরকম চলছি। অভাবের কারণে আমাদের এখানে কোরবানি হয় নাই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার রায়হান আলী মন্ডল বলেন, দক্ষিণ ভগপতিপুরের গুচ্ছগ্রামসহ প্রায় ১৫০টি পরিবারের বসবাস। এখানকার সবাই দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকম জীবন চালান। এই এলাকায় সচ্ছল পরিবার না থাকায় এখানে কোরবানি হয় না। কোরবানি না হওয়ায় এ বছরও তারা কোরবানির মাংস খেতে পারেনি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.আব্দুল গফুর বলেন, ‘এ বছর বন্যার কারণে আমার ইউনিয়নের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর কথা চিন্তা করে বেসরকারিভাবে কয়েকটি স্থানে কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ ভগপতিপুর এলাকায় কোরবানির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। সমাজের দানশীল মানুষ এগিয়ে এলে এই চরের মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটত।’