রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সোহানা পারভীন (৩৭) নামে এক সাংবাদিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ঘরের দরজা ভেঙে মরদেহটি উদ্ধার করে হাজারীবাগ থানার পুলিশ।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলছিল সোহানার মরদেহ। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে কারণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওসি আরও বলেন, সোহানা শেরেবাংলা সড়কের একটি বাসায় থাকতেন। তার ছোট ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি হাজারীবাগ এলাকাতেই বন্ধুদের সঙ্গে থাকেন। তবে কখনো কখনো তিনি বোনের বাসাতে এসে থাকতেন।
জানা গেছে, সর্বশেষ সোহানা অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র সাব এডিটর ছিলেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউন ছেড়েছেন বেশ কয়েক মাস আগে। নতুন চাকরি খুঁজছিলেন। তুলির গ্রামের বাড়ি যশোর সদরে। তার বাবার নাম শাহজাহান। বর্তমানে মনোহরি নামে একটি অনলাইন পেইজ খুলে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
তুলির কাছের বন্ধু-বান্ধবী ও বাংলা ট্রিবিউনের সহকর্মীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে বুধবার নন্দিতা তাবাসসুম নামে একজন বান্ধবী ঢাকায় শেরে বাংলা রোডে (রায়ের বাজার হাইস্কুলের পাশে) তুলির ভাড়া বাসায় যান। তুলি এখানে একাই থাকতেন। ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দারোয়ানের সহযোগিতায় দরজা খোলা হয়। এরপর তুলিকে তার বেডরুমে গলায় ফাঁস দিয়ে হাঁটুগাড়া অবস্থায় খাটের ওপর পাওয়া যায়।
বিকেলে প্রথমে পুলিশ ও পরে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট এসে ঘটনা খতিয়ে দেখে এবং আলামত সংগ্রহ করে। পরে পৌনে ৭টার দিকে ক্রাইমসিন ইউনিটের সদস্যরা বের হয়ে যায়। এরপর সোয়া ৭টার দিকে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
তুলির সাবেক সহকর্মী ও বাংলা ট্রিবিউনের সাবেক ডেপুটি নিউজ এডিটর ফাতেমা আবেদিন নাজলা জানান, তারা কোনো কারণ জানেন না, কেন তুলি এমন পথ বেছে নিল। ব্যক্তিজীবনে তার এমন কোনো ঘটনাও নেই যা থেকে অপমৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে। ঘটনাস্থল দেখে প্রাথমিকভাবে তার কাছেও আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে তার মৃত্যুর আসল কারণ।
তার সাবেক সহকর্মী বাংলা ট্রিবিউনের জয়েন্ট নিউজ এডিটর আনোয়ার পারভেজ জানান, তুলি ব্যক্তিজীবনে হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। তার এমন মৃত্যুর তারা মেনে নিতে পারছেন না।
পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাসুম ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, তারা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে আসেন। তুলিকে তার ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে সিআইডির ক্রাইমসিনকে ডাকা হয়। তারা আলামত সংগ্রহ করে। ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পুলিশের ধারণা ২৪ ঘণ্টা আগে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।