ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে সত্য আমরা বাঙ্গালি’ স্মরণীয় এ উক্তিটি বহু ভাষাবিদ, দার্শনিক, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর। রোববার (১০ জুলাই) খ্যাতিমান এই ভাষা বিজ্ঞানীর ১৩৭তম জন্মদিন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদান রাখা ছাড়াও আরও যে অবদানের জন্য তিনি চিরদিন বাঙালির পরম পূজনীয় হয়ে থাকবেন সেটি হচ্ছে, বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনে তার সাহসী ও জোরালো ভূমিকা।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এনট্রান্স পাসের সময় থেকেই বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। আয়ত্ত করেন আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দিসহ আরও কিছু ভাষা। ১৯১০ সালে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতে বিএ অনার্স এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ইউরোপে চলে গিয়ে পরে প্যারিসের সরোবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

পড়াশোনা শেষ করে বহু বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে দুরূহ ও জটিল সমস্যার যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তিনি পাণ্ডিত্যের পরিচয় দেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা (দুই খণ্ড)’ এবং ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ অন্যতম। তার অন্যতম কালজয়ী সম্পাদনাগ্রন্থ বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান। তিনি আলাওলের ‘পদ্মাবতী’সহ আরও অনেক গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। শিশু পত্রিকা ‘আঙুর’ তারই সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া পাঠ্যপুস্তক অনুবাদ এবং নানা মৌলিক রচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়। ভাষার প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অপার। অনুরাগ ছিল জ্ঞানের প্রতি। ১৯৮০ সালে তাকে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। একই বছর ফ্রান্স সরকার এই ভাষাবিজ্ঞানীকে সম্মানজনক পদক ‘নাইট অব দি অর্ডারস অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ প্রদান করে।

জ্ঞানতাপস মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। তাকে সমাহিত করা হয় ওই হলের পাশেই। এ ছাড়াও তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের নামকরণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *