‘আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’- ১৫০টির অধিক দেশের ১০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির এই ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের মাঠ। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে বৃহস্পতিবার রাতেই মিনা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতিজড়িত আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়েছেন মুসল্লিরা।
সবার পরনে সেলাইবিহীন কাপড়। শুভ্র এক কাপড়েই সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আজ শুক্রবার তারা অবস্থান করবেন চার বর্গমাইল আয়তনের এই বিশাল আরাফাতের ময়দানে। আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসেই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।
১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই হযরত মুহাম্মদ (স) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ। কাকতালীয়ভাবে সেদিনও ছিল জুমাবার। বেশ কিছু কারণে এবারের হজ গুরুত্বপূর্ণ।
দুই বছর পর অন্যান্য দেশের হাজি সাহেবরা এবার হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। সেটাও সীমিত পরিসরে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এই ময়দানেই সমবেত হয়েছিলেন ২৫ লক্ষাধিক মানুষ। এবার যারা হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন তাদেরও মানতে হয়েছে বেশ কিছু শর্ত ও বিধিনিষেধ।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে হাজিরা হজের খুতবা শুনবেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়বেন একসাথে। এ বছর এখানে হজের খুতবা দেবেন মসজিদে নামিরার খতিব মুহাম্মাদ আবদুল করিম আল-ঈসা।
হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মক্কা ও মিনায় ২৩টি হাসপাতাল এবং ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আসা মেডিক্যাল টিমের সদস্যরাও হাজিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করেছেন। ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় বড় ভয় হিটস্ট্রোক। এ ধরনের রোগীদের সেবায় শুধু মিনাতেই চারটি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যার জন্য এক হাজার শয্যা এবং বিশেষ করে হিটস্ট্রোকের রোগীদের জন্য দুইশর বেশি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকছেন ২৫ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী।
আরাফাত থেকে আবারও মিনায় ফেরার পথে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশে ছোড়া হবে। আগামীকাল শনিবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।