আজ ও কাল চাপ বাড়তে পারে সড়কে

Slider জাতীয়


আসন্ন কোরবানির ঈদে কম-বেশি ৮০ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পথে রওনা দেবে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। তবে বুধবার পর্যন্ত বাড়ি ফেরার জন্য রাজধানীর সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালে উল্লেখযোগ্য ভিড় চোখে পড়েনি। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ ও আগামীকাল শুক্রবার থেকে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরার ভিড় বাড়বে। এদিকে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে কমলাপুর স্টেশন থেকে বেশিরভাগ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। ভিড়ও তেমন ছিল না। ফলে যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তি নিয়েই যাত্রা করেছে। তবে ৭টি ট্রেন দেরিতে ছাড়ায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ে ওইসব ট্রেনের যাত্রীরা। এ বিষয়ে রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু বিলম্বে স্টেশনে আসা ট্রেনগুলো ছাড়তে দেরি হয়েছে। বুধবার রাজধানীর সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য কোনো ভিড় ছিল না। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কম-বেশি সব জেলার গন্তব্যে যাওয়া পরিবহনগুলোর কাছে আগামী কয়েকদিনের কম-বেশি টিকেট ছিল। তবে ব্যতিক্রম পাওয়া গেছে বরিশাল অঞ্চলের ভালোমানের পরিবহনের ক্ষেত্রে। বরিশাল অঞ্চলের ভালোমানের বাসের টিকেট এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বুধবার, আজ বৃহস্পতিবার, আগামীকাল শুক্রবার এবং ঈদের দিনসহ পরবর্তী দুদিনের টিকেট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে বরিশাল অঞ্চলের কিছুটা নিম্নমানের সেবা দেওয়া বাসের টিকেট পর্যাপ্ত ছিল।

ঢাকা-ফেনী-বসুরহাট রুটে চলাচলকারী কে কে এক্সপ্রেস পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা স্বপন সময়ের আলোকে বলেন, ‘এখনও ঈদের ভিড় শুরু হয়নি। আশা করছি, আজকালের মধ্যে ভিড় বাড়বে।’

ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ রুটের একটি পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা লিটু বলেন, ‘এ রুটে ঈদে বাড়ি ফেরার কোনো চাপ নেই। কারণ এই রুটের বেশিরভাগই পোশাক কারখানায় কাজ করে। বৃহস্পতিবার পোশাক কারখানাগুলো ঈদের ছুটি দিলে তখন কিছুটা চাপ বাড়বে।’

যশোর-বেনাপোল-মাগুরা রুটের লন্ডন এক্সপ্রেসের টিকেট বিক্রেতা মারুফ বলেন, ‘ঈদে এই রুটে মোটামুটি ভিড় থাকে। এখনও চাপ বাড়েনি। আজকাল চাপ বাড়তে পারে। এরই মধ্যে এই পরিবহনের আগামী কয়েকদিনের বেশিরভাগ টিকেট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।’ ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটের সাকুরা পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা রিপন বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে এই পরিবহনের বুধ থেকে আগামী রোববার ঈদের দিন পর্যন্ত সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।’

চিটাগাং রোড থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে খুলনা অঞ্চলে চলাচলকারী পরিবহনগুলোর মালিক সমিতির লাইনম্যান তুষার সরকার বলেন, ‘কোরবানির ঈদে সাধারণত বাড়ি ফেরার চাপ কিছুটা কম থাকে। এখনও বাড়ি ফেরার চাপ সৃষ্টি হয়নি। আজকাল চাপ হতে পারে।’ পদ্মা সেতু এবারের ঈদযাত্রায় কেমন প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে তুষার বলেন, ‘আগে একটি বাস ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে গেলে পরদিন ঢাকায় ফিরত। পদ্মা সেতু হওয়ায় সে বাসটি এখন পরদিন না এসে ওইদিন রাতেই ফিরতে পারে। এতে সময় বেঁচে যাচ্ছে। ফলে বাসটি পরদিনই আবার যাত্রী নিয়ে রওনা দিতে পারবে।’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বুধবার বলেন, ‘এবারের কোরবানির ঈদে ৮০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারে। এবারের কোরবানির ঈদে প্রায় ৪ কোটি মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত করবে। সড়কপথে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি ট্রিপ হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ৭০-৮০ হাজারের মতো মানুষ সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল ব্যবহার করার সক্ষমতা রয়েছে। রাজধানীর সব টার্মিনাল মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ যাতায়াত করার সক্ষমতা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এবার ঈদে ছুটি কম থাকায় মানুষের বাড়ি ফেরার চাপ বাড়বে। ঈদের ঠিক কয়েকদিন আগে এই চাপ বাড়বে। পদ্মা সেতু হওয়ায় মানুষজন ফেরার পথে যানজটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৮ হাজার যানবাহন চলবে। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে এই সংখ্যা আরও ৪ গুণ বাড়বে। এই যানবাহনগুলো যখন ঢাকায় ফিরবে তখন সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ পদ্ম সেতু ব্যবহার করে যানবাহনগুলো রাজধানীতে প্রবেশের বিশেষ কোনো সড়ক বা পরিকল্পনা নেই। এতে বুড়িগঙ্গা ব্রিজের ওখানে কেরানীগঞ্জ এবং ওইদিকে পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকায় ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে বুধাবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, অসংখ্য যাত্রী নির্ধারিত সময়ের আগেই প্লাটফর্মে এসে অপেক্ষা করছে। ট্রেন প্লাটফর্মে আসার সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড় করে নিজ আসনে গিয়ে বসছে। এদিন উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোতে তুলনামূলক যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ট্রেনগুলোতে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।

কমলাপুর স্টেশনের ৩নং প্লাটফর্মে বসে ছিলেন চট্টগ্রামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রী একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনি। ট্রেন ছাড়ার সময় বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা আগে স্টেশনে আসা রনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে টিকেট পেয়েছি। একটু আগে চলে আসার কারণ ট্রেনে উঠতে না পারার শঙ্কা।’

এদিকে বেশিরভাগ ট্রেন সঠিক সময়ে স্টেশন ছাড়লেও কিছু ট্রেন ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাড়ার সময় ছিল সকাল ৯টা ১০ মিনিট, কিন্তু ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্লাটফর্ম ছেড়ে যায়। জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ১৫ মিনিট দেরি করে বেলা পৌনে ১১টায় ছাড়ে। কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার সময় থাকলেও ৩০ মিনিট দেরি করে ছাড়ে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে। সিলেটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার সময় থাকলেও অন্তত ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। এ ছাড়া নীলফামারী এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট ও খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩৫ মিনিট দেরি করে ছেড়ে যায়। রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা সোয়া ৩টা পর্যন্ত প্লাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ছিল।

ঈদযাত্রার বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, বেশিরভাগ ট্রেনই সময়মতো ছেড়েছে। যে ট্রেনগুলো স্টেশনে আসতে দেরি করেছে, সেগুলোই দেরিতে ছেড়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *