দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়েছে। প্রতিদিনই শনাক্তের হার ও মৃত্যু বাড়ছে। গতকাল একদিনেই ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগতত্ত্ববিদরা এ পরিস্থিতিকে করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আগের সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে পরীক্ষার হার বেড়েছে ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং শনাক্তের হার বেড়েছে ৫২ দশমিক ৮ শতাংশ। মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গ্রামের বাড়ি যেতে রাজধানীবাসী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। কিন্তু বাস, লঞ্চ, ট্রেন- কোনো বাহনেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এতে করোনা সংক্রমণ কয়েকগুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত দুই বছরে ঈদের সময়ে রাজধানীবাসী করোনাকে সঙ্গী করেই যার যার এলাকায় গেছেন। স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালন না হওয়ায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। পরে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ে কয়েকগুণ। এবার যদি সে ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি কেউ না হতে চান, তা হলে ঈদযাত্রায় অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা
ড. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাস এবারও ঈদযাত্রায় সঙ্গী হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অসচেতন হলেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে- সে জন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং সরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বদ্ধ ঘরে অনেকে মিলে অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঈদের জামাত খোলা ময়দানে করলে ভালো হয়। নামাজ শেষে কোলাকুলি ও করমর্দন থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া এখনো যারা টিকার পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেননি, তাদের অবশ্যই টিকা নিয়ে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ৬ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ১১৮ দশমিক ০১ শতাংশ। ১৩ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত সংক্রমণের হার বেড়েছে এর আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩৮৩ শতাংশ। পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত হার বাড়ে ২৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ। বিগত এক মাসে মৃত্যুহার বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ ৪ শতাংশ। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং ঈদে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ঈদযাত্রায় স্বাস্থাবিধি প্রতিপালনে কঠোর নির্দেশনা আসতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় ঈদে যারা বাড়িতে যাবেন, তাদের অবশ্যই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রা করতে হবে। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ- স্বাস্থ্যবিধির প্রতি কেউ অবহেলা করবেন না। নিজের, পরিবারের সুরক্ষার জন্য অব্যশই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। তিনি বলেন, যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন- তা হলে ঈদের আনন্দ মøান হবে না। কিন্তু না মানলে, ঈদের পরে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। ইতিপূর্বে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা দেখেছি। তখন সংক্রমণ বাড়বে, যাদের নানা ধরনের শরীরিক জটিলতা রয়েছে তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়বে।
গতকাল সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ৫ মার্চ করোনায় একদিনে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর এক সঙ্গে এতজনের মৃত্যু আর হয়নি। সেই হিসাবে গত চার মাসের মধ্যে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এ সময়ে নতুন করে ২ হাজার ২৮৫ জনের শরীরে রোগটি শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনাক্ত হন ১ হাজার ৯০২ জন।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড ইউনিটপ্রধান ডা. জাকির হোসেন খান স্বাক্ষরিত করোনাবিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মৃত ১২ জনের ৯ জনই ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে একজন করে মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের ৯ জন পুরুষ ও তিন জন নারী।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীসহ সারাদেশে ৮৮০টি পরীক্ষাগারে ১৩ হাজার ৮২৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ৮৪২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৯টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৯টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৯ লাখ ২৮ হাজার ২২০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এ সময় সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৪৮২। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৩৬ ভাগ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৭ ভাগ। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় ২৯ হাজার ১৪৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৬২৩ জন এবং নারী ১০ হাজার ৫৫১ জন।