স্কুলের এক ছাত্রীর কাছে ‘হিরো সাজতেই’ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর হামলা করে আশরাফুল আহসান জিতু নামের ওই ছাত্র। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কারওয়ান বাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় র্যাব।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ভোর থেকে ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আশুলিয়ার ওই স্কুলছাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিতু জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে ওই স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে শিক্ষক উৎপল তাকে শাসন করে। এই ঘটনায় সে তার শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং ওই ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম প্রদর্শন করার জন্য তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সে ২৫ জুন একটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে ও তার শিক্ষককে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অতর্কিতভাবে আঘাত করতে থাকে। জিতু তার শিক্ষককে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে এবং পরে আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে।
জিতু এলাকায় জিতু দাদা নামে পরিচিত ছিল বলেও জানান খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, স্কুলে সে বেপরোয়া চলাফেরা করতো। বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতো। শৃঙ্খলা কমিটি বিভিন্ন সময় অভিযোগ পেয়ে জিতুকে সতর্ক করা হয়েছিল। এসব কারণেও সে ওই শিক্ষকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুলকাটা, ধূমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে প্রেষণা প্রদান করতেন। এ ছাড়া তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।
‘জিতু ওই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল পরে মাদরাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে’, যোগ করেন খন্দকার আল মঈন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন শনিবার দুপুরে চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপলের ওপর। প্রথমে ওই ছাত্র শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ ছাড়া স্ট্যাম্পের সূচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপলকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।