দেশে আবারও অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। ইতোমধ্যে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে পেঁয়াজের দাম অর্ধশতকের ঘর ছাড়িয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টি-বন্যা ও বাড়তি মজুদের কারণে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তবে ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকারসংশ্লিষ্টদের মতে, পেঁয়াজের বাজারে বন্যার প্রভাব পড়ার কথা নয়। মূলত বৃষ্টি-বন্যাকে পুঁজি করে আবারও বাজারে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি মুনাফা করতে চাইছে তারা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে যা ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও ৩৫ টাকাতেও পাওয়া গেছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম দুই দফায় বেড়েছে। গত শুক্রবার একদিনের ব্যবধানেই বেড়েছে ৫ টাকা। মালিবাগ বাজারের মেসার্স গাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, গত সপ্তাহের শুরুর দিকেও ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। সপ্তাহের শেষে দাম বেড়ে ৫০ টাকা হয়। এরপর শুক্রবার আবারও ৫ টাকা বাড়ে। এখন দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছি ৫৫ টাকা দরে। মাসুদ আরও বলেন, আড়তগুলোতেই দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই খুচরাতেও বাড়াতে হয়েছে আমাদের। একই কথা জানালেন কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মুদিপণ্য বিক্রেতা ও মিলন স্টোরের কর্ণধার মো. মিলনও। তিনি বলেন, এ বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাছাই করা ভালো মানের পেঁয়াজ ৫৫ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা বৃষ্টি ও বন্যার কথা বলছেন। তারা বলছেন, এ কারণে রাজধানীর আড়তে পেঁয়াজের আমদানি কম।
অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতারা দাবি করছেন, দেশি পেঁয়াজের বড় অংশ এখন মজুদে চলে গেছে। অনেক গৃহস্থ ও আড়তদার বাড়তি মজুদ করছেন। বন্যা ও বৃষ্টির ফলেও পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে স্থানীয় মোকামগুলোতেই এখন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজের দামে। রাজধানীতেও সম্প্রতি দেশি পেঁয়াজের আমদানিতে টান পড়েছে। ফলে দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাজধানীতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের মিতালী আড়তের কানাই সাহাসহ একাধিক পাইকারি বিক্রেতা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৭ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত শনিবার শ্যামবাজারে পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি। সেখানে গতকাল এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি। তবে এদিন সাধারণ মানের পেঁয়াজ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বৃষ্টি-বন্যার অজুহাত দিয়ে বাজারে পেঁয়াজসহ অনেক পণ্যেরই দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেটসহ দেশের যেসব অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে, সেসব অঞ্চলের সঙ্গে অনেক পণ্যের বিশেষ করে পেঁয়াজের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। সুতরাং এই কারণে বাজারে সংকট হওয়ার কথা না। এগুলো অজুহাত ছাড়া আর কিছু নয়। অসৎ ব্যবসায়ীরা সব সময়ই অজুহাতের অপেক্ষায় থাকেন। যতদিন আমাদের ব্যবসায়ীদের নীতিনৈতিকতার জায়গাটা ঠিক না হবে, ততদিন এই কারসাজি থামানো কষ্টকর হয়ে যাবে। তবে বাজার আবার অস্থির হওয়ার আগেই নজরদারি জোরদার করা দরকার। অতিরিক্ত মজুদ ঠেকাতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও প্রয়োজন।