সিলেটে বাসাবাড়ি থেকে নামছে পানি, আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছেন মানুষ

Slider জাতীয়


সিলেটে ১৩ উপজেলা ও মহানগরের বাসাবাড়ি থেকে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি নামলেও বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের সামনে এখনো পানি রয়ে গেছে। একই সঙ্গে পানিতে ভিজে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেক জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে। গত ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় শনিবার (২৫ জুন) পর্যন্ত ১১দিনে সিলেট জেলায় ১৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

এদিকে, পানি নেমে যাওয়া অব্যাহত থাকায় ও বন্যাকবলিত এলাকার বাসাবাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজ নিজ বাসাবাড়িতে ফিরছেন বন্যাদুর্গত লোকজন। অনেককে বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টা শুক্রবার (২৪ জুন) থেকে শনিবার (২৫ জুন) জেলার ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৯ জন মানুষ বাসা-বাড়িতে ফিরে গেছেন। একই সময়ে পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২৪ জুন পর্যন্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক, জেলার ১৩টি উপজেলা ৯৯টি ও ৫টি পৌরসভার মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩২০ পরিবারের ২০ লাখ ২৫ হাজার ২৪৫ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার ১৫০টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া জেলার ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

একই সময়ে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনে ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন বন্যার্ত মানুষ ও ২৮ হাজারের ওপর গৃহপালিত পশু আশ্রয় নেয়।

শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের মিডিয়া অফিসার সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, পানি নামতে শুরু করায় গত ২৪ ঘণ্টায় আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়েছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৯ জন মানুষ। এসময় আটটি আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক, জেলার ১৩টি উপজেলা ৯৯টি ও ৫টি পৌরসভায় মোট ৬০৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৯ হাজার ৬৯৯ জন মানুষ রয়েছেন।

এর মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশনের মোট ৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার ৫০৭জন বন্যার্ত রয়েছেন। অন্য ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শনিবার মোট পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে মাত্র ৮৯৫ জন মানুষ আছেন। এর আগের দিন ওই উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র গুলো থেকে একদিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১ হাজার ২৩১ জন নিজ নিজ বাসাবাড়িতে ফিরে গেছেন।

বর্তমানে বিশ্বনাথে ৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজার ৭৪০ জন, সিলেট সদরে ৪৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ৬৮০ জন, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৬৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪ হাজার ৯৮৩ জন, গোয়াইনঘাটে ১৩ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৮০জন, ওসমানীনগরে ৬৫ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ৭৬০ জন, দক্ষিণ সুরমায় ৭৪ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ২৪২ জন, জৈন্তাপুরে ১৩ আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৪ জন, গোলাপগঞ্জে ৪৮ আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৯৮৫ জন, কানাইঘাটে ৪৭ আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৭ জন, ফেঞ্চুগঞ্জে ২০ আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৪৩২ জন, বিয়ানীবাজারে ৭৩ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার ৯৭৮ জন এবং জকিগঞ্জ উপজেলায় ৫৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৫৬ জন বন্যাদুর্গত মানুষ আছেন। মোট ৬০৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৯ হাজার ৬৯৯ জন মানুষ রয়েছেন।

শনিবার সকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ইসলামপুর গ্রাম ও বিকেলে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় লোকজন বাসাবাড়ি ফিরছেন।

নগরের ঘাসিটুলা এলাকার সীমা বেগম বলেন, বাসার পানি নেমে গেলেও লেপ-তোষকসহ বাসার সব আসবাবপত্র ভিজে গেছে। এমন ভয়াবহ বন্যা আমার জীবনে আর দেখিনি। এ বন্যা আমাদের সবশেষ করে দিয়েছে।

মহিমা আক্তার নামে এক গৃহকর্মী বলেন, দীর্ঘ ১০দিনের বেশি সময় বাসাটি পানির নিচে ছিল। এবারের বন্যার দুভোর্গের কথা কোনোদিন ভোলতে পারবো না।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ফখর আহমদ বলেন, তার ঘরের মধ্যে বুক সমান পানি ছিল। এখন সম্পূর্ণ না নামলে ডাকাত আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, নগরের বন্যাকবলিত প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকার পানি নেমে গেছে। আর বন্যার সময় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। অনেকেই বাসাবাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে এখনো ২৫ আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৭ সহস্রাধিক মানুষ রয়েছেন। তাদের সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ত্রাণ দিচ্ছে।

অন্যদিকে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমার পানি সিলেট সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার নিচে নেমে গেছে। তবে এ নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার সন্ধ্যায়ও বিপৎসীমার দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া কুশিয়ারার নদীর পানি শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কুশিয়ারা নদীর এ দুই পয়েন্টে শনিবার পানি বাড়েনি। কিন্তু পানি কমেওনি খুব একটা। শুধু ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টার তুলনায় বিকেল ৬টায় মাত্র দশমিক এক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। আর শেওয়া পয়েন্টে পানি বাড়েনি আবার কমেওনি। অপরিবর্তিত ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, পানি কমতে শুরু করলেও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে এখন পানি কমার ধারা অব্যাহত থাকবে আশা করি। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে বিপৎসীমার নিচে নেমে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *