পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় গতকাল রবিবারও দেশের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয়। এমনকি আগামী দুই-তিন দিনের আগে সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে গঙ্গা অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশের মধ্যাঞ্চলেও। তবে সিলেট অঞ্চলে পানি আর বাড়েনি। বরং আজ সোমবার থেকে সিলেট অঞ্চলের পানি নামতে শুরু করবে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আর নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার ভোর থেকে গতকাল রবিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সিলেটে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৩০৪ মিলিমিটার। আর রবিবার সারাদিনে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১ মিলিমিটারেরও কম। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জিতে গত শনিবার বৃষ্টিপাত ছিল ২৮৯ মিলিমিটার। গতকাল তেমন বৃষ্টি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের বন্যার মূল কারণই চেরাপুঞ্জির ভারী বৃষ্টি। সেখানকার বৃষ্টি কমে গেছে; আবার সিলেটেও তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাই সিলেট অঞ্চলে ধীরে ধীরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর সবগুলোরই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বাড়ছে। এর প্রভাবে গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি
হয়েছে। আগামী কয়েক দিন সেখানে পানি আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের উজানের আরেক নদী গঙ্গা অববাহিকায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে সেখানে পানি বেড়ে তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি একযোগে বাড়লে দেশে মাঝারি থেকে বড় বন্যা হয়ে থাকে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বাড়লে তা চার থেকে সাত দিনের মধ্যে পদ্মা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। কিন্তু গঙ্গার পানি একই সময়ে বাড়লে ব্রহ্মপুত্রের পানির চাপে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত পানি আটকে থাকে। ফলে পানি ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একে সাইফুল ইসলাম বলেন, সিলেটের বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়তে শুরু করতে পারে। আর ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পানি একসঙ্গে বাড়লে বন্যা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে ও দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারে। তিনি বলেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে। এগুলো সুরমা, কুশিয়ারা মেঘনা হয়ে ভৈরব ও চাঁদপুর দিয়ে বঙ্গোপসাগরের নেমে যাবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিলেটে বৃষ্টি কমে গেলেও চট্টগ্রামে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতও আজ দিনভর বৃষ্টি চলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা আরও বাড়তে পারে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ মেঘ আসা অব্যাহত রয়েছে। আর তা হিমালয় পর্বতমালাসহ বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আগামী কয়েক দিন দেশের উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ধরলাসহ প্রধান নদ-নীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারেও বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি অথবা ওপরে অবস্থান করতে পারে।
সিলেট : পানিবন্দি অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ঘর ছেড়েছে বহু পরিবার। ঠাঁই নিয়েছে নানা আশ্রয়কেন্দ্রে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনেও থাকছেন অনেকে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার ও পানীয় জলের তীব্র সংকট।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত জানান, জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় নৌকার সংকটে এসব ত্রাণ পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বন্যাকবলিত সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ছয় হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে। পৌঁছে দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া খাদ্য এবং চিকিৎসাসেবাও দিয়ে যাচ্ছে।
বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, বন্যার্তদের ত্রাণের কোনো সংকট নেই। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। কবলিত এলাকার প্রধান সড়কসহ উপজেলা ও গ্রামীণ সড়কের ৮০ ভাগ তলিয়ে গেছে। উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ঢাকা-সিলেট রেল যোগাযোগ ফের চালু হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে এই রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে স্টেশনে বন্যার পানি উঠায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, সিলেট অঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ : গত বৃহস্পতিবার থেকে চারদিন ধরে সুনামগঞ্জ শহরের গ্যাস, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। মোমবাতি, খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে নিদারুন কষ্টে আছে সুনামগঞ্জবাসী।
মৌলভীবাজার : কুশিয়ারাসহ সবকটি নদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় জেলায় ৩৫ ইউনিয়নের ৩২৫ গ্রামের প্রায় দুই লাখ ৭ হাজার ৫ শত মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বিদ্যুতের সাব-স্টেশনে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে জুড়ী ও বড়লেখায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সে কোমর পানি থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়েছে।
হবিগঞ্জ : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। রবিবার বিকাল পর্যন্ত জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার নয়টি, আজমেরীগঞ্জের পাঁচটি, লাখাই উপজেলায় চারটি ও বানিয়াচঙ্গের তিনটি ইউনিয়নে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এর ফলে অন্তত ১৫০টি গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ পর্যন্ত ওই চার উপজেলার ৪ হাজার ৫শ ৮১টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদরের গোয়ালনগরে খোয়াই নদীর ৭ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
নেত্রকোনা : বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। গতকাল রবিবার থেকে খালিয়াজুরীতে আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০৪ সদস্যের একটি দল। এছাড়া জেলার ১৮৮টি আশ্রয় কেন্দ্রের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এ দুই উপজেলার প্রায় সবগুলো গ্রামের বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। এছাড়া মদন, খালিয়াজুরী, সদর, আটপাড়া ও বারহাট্টা উপজেলা মিলে প্রায় নয় লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলার সঙ্গে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের সড়ক পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
মানিকগঞ্জ : পদ্মা ও যমুনার তীরবর্তী হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার নিচু ও চর এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনটি উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুড়িগ্রাম : বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলার ২২ হাজার পরিবারের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদ এবং ধরলা ও দুধকুমার নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় নৌকায় বসবাস করছেন অনেকে।
বগুড়া : সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার পরিবার। বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও খাবার সংকটে রয়েছে বানভাসি মানুষ। এখন পর্যন্ত সারিয়াকান্দির প্রায় ৮৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
গাইবান্ধা : সবকয়টি নদনদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল বিকাল পর্যন্ত যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৭ সেমি, তিস্তার ২৮ সেমি ও করতোয়ার পানি ১৪৫ সেমির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্লাবিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নদীর চর ও নিম্নাঞ্চল। এতে পাট, তিল, কাউন এবং বিভিন্ন সবজি খেতসহ তলিয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানের রাস্তাঘাটে পানি ওঠায় স্বাভাবিক চলাচলে বিঘিত্ন হচ্ছে।
লালমনিরহাট : তিস্তা নদীর পানি ফের বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পাঁচ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। রবিবার সকাল ৯টায় হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে এ নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
জামালপুর : যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রবিবার সকাল ৯টায় দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশিগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি।
সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ডপয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রবিবার সকালে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়ালসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে। এর ফলে ইতোমধ্যে যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হচ্ছে।
ভোলা : বন্যা কবলিত মানুষদের সহায়তা ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের ১৪ সদস্যের একটি দল। চারটি দ্রুতগামী নৌযান নিয়ে রবিবার দুপুরে ভোলা কোস্টগার্ডের জোনাল অফিস থেকে রওনা দেন তারা। বিকাল থেকে তারা কার্যক্রম শুরু করেন। ভোলা কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শাফিউল কিঞ্জল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
ফরিদপুর : জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও এখন তা বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে দু-একদিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। পদ্মা ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি, কুমার ও চন্দনা-বারাসিয়া নদীর পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী : পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের লঞ্চঘাটের একটি ওয়ে ব্রিজ তলিয়ে গেছে। ফলে একটি ওয়ে ব্রিজ দিয়ে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে। এক ব্রিজ দিয়ে ঢাকাগামী ও ঢাকা ফেরত যাত্রীরা চলাচল করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
টাঙ্গাইল : বাসাইলে সড়ক ভেঙে প্রায় আটটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া সড়ক পথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার বিকালে আন্ধিরাপাড়া-বালিনা সড়কের বালিনা উত্তরপাড়া অংশ ভেঙে যায়। এ ছাড়াও রবিবার সকালে আন্ধিরাপাড়ায় আরও তিনটি স্থানে সড়ক ভেঙে যায়।