ঢাকা: সম্প্রতি সারাদেশে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ১৫টি জেলায় ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশু-পাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে মারা গেছেন ৪৭ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনন্ত ৪৩ হাজার ১৮৪টি পরিবার। এসব পরিবারকে নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে সরকার।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) তথ্যানুযায়ী, গত ৪ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ে ১৫টি জেলায় ৪৭ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ২৬৬ জন।
এছাড়া গত পাঁচদিনের ঝড়ে ১৫ জেলার ৪৭ উপজেলায় ৪৩ হাজার ১৮৪টি পরিবারের ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব পরিবারের ৯ হাজার ৫৭টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৩১ হাজার ৬১৯টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানায় এনডিআরসিসি।
এনডিআরসিসির কাছে জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, কালবৈশাখী ঝড়ে পাঁচদিনে ৬ হাজার ৯শ’ ৮০ একর জমির ফসল
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৯টি।
সবশেষ ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটের বজ্রপাতে তিনজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হন। একই দিন, কুষ্টিয়ার তিন উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ৩৮ হাজার ৩০১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।
৫ এপ্রিল যশোর সদর ও মণিরামপুর উপজেলায় ঝড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, ৪ ও ৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগরী ও আশেপাশের এলাকায় ঝড়ে বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হন।
গত ৪ এপ্রিল বগুড়া, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, পাবনা, কুড়িগ্রাম, জামলপুর ও খুলনার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায় বলে জানিয়েছে এনডিআরসিসি।
সংস্থাটির তথ্য মতে, ৪ এপ্রিলের ঝড়ে বগুড়ার ১২ উপজেলায় ১৯ জন নিহত ও ১২৬ জন আহত হন। একই দিন, রাজশাহীর নয় উপজেলায় ঝড়ে ৬ হাজার ৯শ’ ৬০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ২৫ হাজার ৯০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই দিন রাজশাহীতে নিহত হন পাঁচজন, আহতের সংখ্যা ছিলো ২৭ জন।
নাটোরে তিনজনের প্রাণহানিসহ ২৪ জন আহত, নওগাঁয় নিহত একজন ও আহত ৬০ জন, সিরাজগঞ্জে তিনজন নিহতসহ ১৬ জন আহত এবং ২শ’ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৪শ’ ৫০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত, ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশিক ক্ষতি ও ৪ হাজার ৯শ’ ৮০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া কালবৈশাখীতে গাইবান্ধায় ৬শ’ ৭৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও দুই হাজার ৫শ’ ৩৯টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও একজনের মৃত্যু হয়, দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ৩৭টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পাবনায় দু’জনের মৃত্যু, কুড়িগ্রামে ১২১টি পরিবার ও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জামালপুরে ৪ হাজার ৭শ’ ৬২টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক হাজার ২শ’ ২২টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও তিন হাজার ৫শ’ ৪০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ক্ষতি হয় ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।
সেদিন জামালপুরে দুই হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। খুলনায় ২০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও একজন নিহত হন।
এছাড়া ঝিনাইদহে ঝড়ে মারা যায় কয়েক শ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
এনডিআরসিসি’র তথ্য থেকে আরও জানা যায়, নিহত প্রতিজনের পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলা প্রশাসন থেকে নগদ ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ঘরবাড়ি নির্মাণে জিআর চাল ও ঢেউটিন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন জেলায় অর্থ, জিআর চাল ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উইং) কামরুল হাসান বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ অব্যাহত রয়েছে।