চীনে জুলাই মাসে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেবে সৌদি আরব। শুক্রবার (১০ জুন) সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের আরামকো চীনের অন্তত চারটি শোধনাগারকে অগ্রিম জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী জুলাই মাসে তারা কম তেল পাবে।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর বিশ্বব্যাপী সৌদি আরবের তেলের চাহিদা বেড়েছে। এই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সৌদি আরব চীনের কয়েকটি শোধনাগারকে জুলাই মাসে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
রয়টার্স ও ব্লুমবাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত তাদের চুক্তিমতো পুরো তেল পাবে। এমনকি মালয়েশিয়ার পেংজেরাং তেল শোধনাগারসহ কোনো কোনো দেশ চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত তেল পাবে। ইউরোপের অন্তত তিনটি শোধনাগার চুক্তিমতো সৌদি কোম্পানির কাছ থেকে জুলাই মাসে পুরো তেলের সরবরাহ পাবে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে সৌদি আরব আকস্মিকভাবে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ২ দশমিক ১০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ১২০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
গত ১২ মে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেট জানায়, আরামকো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি হিসেবে পরিণত হয়েছে। শুধু আরামকো নয়, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৌদি কোম্পানি বিপি, এক্সনমোবিল ও শেল বিপুল রাজস্ব আদায় করেছে। এ বছর দেশটিতে তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে।
আর্থিক বাজার তদারকি সংস্থা রিফিনিটিভের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আরামকোর সম্পদের পরিমাণ প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বলছে, সৌদি আরামকোর এখন দৈনিক আয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। কোম্পানিটি প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেলের তেল প্রক্রিয়াজাত করছে।
তবে সৌদি আরামকোর তেল উৎপাদনে খাটুনি কম। অল্প খরচে ব্যাপক তেল উৎপাদন করা যায়। কারণ কোম্পানিটি উপকূল থেকে খুব সহজে তেল তুলতে পারে। লাভজনক এই কোম্পানিটিতে সৌদি সরকারের ৯৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত মার্চে আরামকো জানায়, ২০২৭ সাল পর্যন্ত তারা প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৩০ লাখ ব্যারেল ক্রুড উৎপাদন করবে। বর্তমানে তারা এক কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল ক্রুড উৎপাদন করছে।
চীন শুধু সৌদি নয়, রাশিয়া থেকেও তুলনামূলক কম দামে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে চীন। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়ার রফতানি কমেছে। ইন্ট্যারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, রাশিয়া থেকে তেলভর্তি কার্গো জাহাজ চীনে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার মোট রপ্তানির ২৭ শতাংশ তেল কিনেছিল চীন, যার মূল্য ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যদিও এটি চীনের মোট তেল আমদানির মাত্র ১৬ শতাংশ। সরকারি চুক্তি অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার তেল পাচ্ছে চীন।
চলতি মে মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে রেকর্ড করেছে চীন। এ মাসে প্রতিদিন রাশিয়া থেকে প্রায় ১১ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে দেশটি। অথচ এ বছরের প্রথম তিন মাসে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৭ লাখ ও গত বছর গড়ে রাশিয়া থেকে ৮ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছিল দেশটি।