যাত্রীদের অনুরোধ শোনেননি চালক

Slider টপ নিউজ

c3680814dbfc14089adf1e8987e7a872-faridpur

ফরিদপুর: বারবার বলেছিলাম ভাই, এভাবে চালাবেন না, অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। শুধু আমি না, বাসের আরো বেশ কয়েকজন যাত্রীও চালককে বারবার সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু কোনো অনুরোধই কানে পৌঁছায়নি তার।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবী নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শাহীন মিয়া  এভাবে দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্ত্রী সম্পাকে নিয়ে বাসের শেষ দিকের বাম সারিতে বসেন শাহিন। তিনি বলেন, আমিন বাজার পার হওয়ার পর বেশ কয়েকটি গাড়িকে বেপরোয়াভাবে ওভারটেক করেন চালক। শুধু তাই নয়, তাড়াহুড়ো করে চালানোর প্রবণতাও ছিল তার মধ্যে।

শাহিন বলেন, শুরু থেকেই দ্রুত ও বেপোরোয়া চালাতে থাকায় সাবধানে চালানোর জন্য বাসের সামনের যাত্রীরা বেশ কয়েকবার তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কারো কথাই শোনেননি।

আহত শাহীন বরিশাল জেলার শিকারপুর থানার বাবুগঞ্জ গ্রামের শাহ আলমের ছেলে।রাজধানীর মিরপুর ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। দুর্ঘটনায় স্ত্রী সম্পাও মারাত্মক আহত হয়েছেন।

একই কথা বলেন মানিক নামে অপর এক আহত যাত্রী। তিনি পাবনা জেলার ফরিদপুরের আলমাসের ছেলে। পটুয়াখালিতে এমবিএল নামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন তিনি। কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে চড়েন মানিক।

আহত আরেক যাত্রী বরিশাল জেলার আমতলী হলুদিয়ার স্বাস্থ্য সহকারী রুবেল বলেন, অনেকবার অনুরোধ করার পরও চালক তা শোনেননি।

বুধবার (০৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১টার কিছু সময় পর সাকুরা পরিবহনের একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে সোনারতরী পরিবহনের (ঢাকা-মেট্রো ব ১৪-৭০৭৪) যাত্রীবাহী বাসটি।

দুর্ঘটনায় পর ঘটনাস্থলেই ১৯ জন মারা যান। এছাড়া ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান ৩ যাত্রী। আর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা ২১ যাত্রীর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আরও ৩ যাত্রী।

আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর মেডিকেলের কর্তব্যরত চিকিৎসক পার্থ সারথী।

নিহতদের মধ্যে আকলি আক্তার, আসমা, আমেনা, হেলাল ও শাহিনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। এছাড়া শফিকুলের বাড়ি (২৫) গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর, আবজাল মিয়া (৬৫) ও সূর্য বেগমের (৪০) বাড়ি বরিশাল, রেজাউল (৩৫) মির্জাগঞ্জ ও মনিরুল ইসলাম (৩৫) যশোরের বাসিন্দা। অপর নিহত হাসনা বেগমের (৪৫) পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়েও পুলিশের এএসপি বেলাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় পর গাছের সঙ্গে ধাক্কায় বাসটির সামনের অর্ধেক দুমড়ে মুচড়ে গেছে। বাসটির দ্রুতগতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেককের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক সরকার শরাফত আলী।

এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুর রশিদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *