বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
খালেদা জিয়া হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগেই তার বাসা ফিরোজায় পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রাতেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন মির্জা ফখরুল।
এ সময় তিনি জানান, চিকিৎসকরা যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন, তাতে দেখা গেছে আগের দিন (বৃহস্পতিবার) বিকেলে থেকে তার (খালেদা জিয়া) হার্টে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। উনি চাপা স্বভাবের, এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেননি। চিকিৎসকরা আজকে (শুক্রবার) সন্ধ্যায় যখন চেক করতে গিয়েছেন তখন তারা দেখেছেন তার সমস্যা হয়েছে। পরে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
মির্জা ফখরুল জানান, তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা এখন স্টেবল (স্থিতিশীল) আছে। এনজিওগ্রাম করার পরে বোঝা যাবে তার সমস্যা কতটা জটিল। এমনিতেই তো দেশনেত্রী গুরুতর পেসেন্ট। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আবার হার্টের সমস্যা, এটা নিঃসন্দেহে জটিল। আমরা আশাবাদী তিনি আগের মতো কাটিয়ে উঠবেন এবং সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
খালেদা জিয়ার মাইল স্ট্রোক হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি জানান, আমি এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারবো না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে বিষয়টি জানা যাবে। আর এ বিষয়ে চিকিৎসকরাই আপনাদেরকে ভালো বলতে পারবেন। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে যতটুকু জেনেছি, সেটুকু আপনাদেরকে জানালাম। তিনি বর্তমানে সিসিইউতে আছেন।
ফখরুল আরও জানান, কাল (শনিবার) সকালে চিকিৎসকরা বোর্ডে বসার পর সিদ্ধান্ত নিবেন তার চিকিৎসার বিষয়ে।
এর আগে বিএনপির প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) জরুরি ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
এদিকে সরকারের নির্বাহী আদেশে ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ছিলেন।
‘বিদেশে যাওয়া যাবে না এবং বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে হবে’- এ দুই শর্তে অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তিতে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এর ক্ষমতাবলে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর দফায় দফায় বাড়ে তার মুক্তির মেয়াদ। সবশেষ গত মার্চ মাসে শর্ত অপরিবর্তিত রেখে আরও এক দফা তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে সায় দেয় সরকার।
এছাড়া এরআগে গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে এদিনই গুলশানের বাসায় ফিরেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ১৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়। এরপর দীর্ঘদিন সিসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীন চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১১টি মামলার মধ্যে ২০১৫ সালের প্রথম ৩ মাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১০টি মামলা দায়ের করা হয়। অপর মামলাটি মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের নিয়ে দেশদ্রোহী মন্তব্য করার অভিযোগে ঢাকার একটি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এ ৩টি মামলা ঢাকার আরও তিনটি বিশেষ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ১৫ আগস্ট ‘ভুয়া জন্মদিন’ পালনের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলা ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি অগ্নিসংযোগের মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি মামলা কুমিল্লার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।