মাঙ্কিপক্স স্থানীয় রোগ না—এমন দেশগুলোতেও ভাইরাসটির সংক্রমণ স্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি বাস্তবিক বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার (৮ জুন) সংস্থাটি বলেছে, এ রকম দেশগুলোতে এক হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে।-এএফপির
ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আধানম গেবরিয়াসুস বলেন, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক টিকা দেওয়ার সুপারিশ করছে না জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রাদুর্ভাব থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর আসেনি।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, মাঙ্কিপক্স স্থানীয় রোগ না এমন দেশগুলোতেও ভাইরাসটি স্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আফ্রিকার ৯টি দেশে পশুপাখিবাহী ভাইরাসটি স্থানীয় রোগের আখ্যা পেয়েছে। কিন্তু এবার তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও ছড়াচ্ছে। গেল মাস থেকে ব্রিটেন, স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকায় মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
টেড্রোস আধানম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ২৯টি দেশ থেকে এক হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের খবর এসেছে। কিন্তু যেসব দেশ থেকে এই খবর আসে, সেখানে ভাইরাসটি কোনো স্থানীয় রোগ না। পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষরাই ভাইরাসটিতে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, কিছু দেশ থেকে আক্রান্তের খবর আসছে, যেটা পরিষ্কার কমিউনিটি সংক্রমণ। আক্রান্তের মধ্যে নারীরাও আছেন।
কমিউনিটি সংক্রমণ বলতে বোঝায়, যখন কোনো রোগ বা মহামারি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কারণ কার মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়েছে তা শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের ভাষায় এমন পরিস্থিতিকে চেইন রি-অ্যাকশনও বলা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণদের মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের শঙ্কা বিশেষভাবে উদ্বেগ তৈরি করছে। উদ্ভূত দেশগুলোর বাইরে চলে এসেছে রোগটি। হঠাৎ করে বিভিন্ন দেশে এই প্রাদুর্ভাব বলে দিচ্ছে, কখনো-কখনো রোগটির সংক্রমণ অশনাক্ত রয়ে গেছে। কিন্তু কতদিন রোগটি শনাক্ত না থেকেই অবাধে ছড়িয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় নয়, এমন কোনো দেশে ভাইরাস ছড়ালে তাকে প্রাদুর্ভাব বলে। টেড্রোস বলেন, কয়েক দশক ধরে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে আসছেন আফ্রিকার অধিবাসীরা। এতে তাদের প্রাণহানি ঘটছে। চলতি বছরেও এক হাজার ৪০০ সন্দেহভাজন রোগীর খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ৬৬ জন মারা গেছেন।
যারা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে বাস করছেন, তারাও একই ধরনের উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। কাজেই এসব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান ডব্লিউএইচওপ্রধান।
রোগটির টিকা যেখানে সহজলভ্য, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীসহ যারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। টেড্রোস আধানম বলেন, যাদের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তাদের বাড়িতে আলাদা করে রাখা হবে। তাদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করার পাশাপাশি বাড়ির লোকজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এড়িয়ে যেতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা সিলভি ব্রিয়ান্ড বলেন, মঙ্কিপক্স ঠেকাতে গুটিবসন্তের টিকা ব্যবহার করা উচিত।