ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর করা রিট আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করেন।
অন্যদিকে একই সিটির মেয়র পদপ্রার্থী মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ করায় সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল করেছে সোনালী ব্যাংক। তাদের আপত্তি রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ব্যাংকের দাবি, তাবিথ ঋণখেলাপি। আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এই আপিলের শুনানি হবে। ফলে তাবিথের প্রার্থিতাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ কারণে উত্তর সিটিতে বিএনপি মেয়র পদপ্রার্থী নিয়ে আরও সংকটে পড়ল। মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিলের পর কেউ কেউ ছেলে তাবিথকে, আবার কেউ কেউ বিকল্পধারার প্রার্থী দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরীকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ভাবছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, মাহীকে প্রার্থী করা নিয়ে ২০-দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের মধ্যে মতবিরোধ আছে। ইতিমধ্যে তারা এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করেছে। এ কারণে মাহীকে সমর্থন দেওয়া নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির চেয়ারপারসন গতকাল রাতে তাবিথ আউয়াল, তাঁর মা নাসরিন আউয়াল মিন্টুকে তাঁর গুলশানের বাসায় ডেকে কথা বলেছেন। তাঁকে বিএনপির সমর্থন দেওয়া হতে পারে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
মাহীকে ২০ দলের সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহী বি. চৌধুরী ২০ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমরা জোটের বাইরে কাউকে সমর্থন দিতে রাজি নই।’
গত শনিবার আপিল শুনানির প্রথম দিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং দক্ষিণে বিএনপির কারাবন্দী নেতা নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত আপিলেও বহাল রাখা হয়। পরে মিন্টু মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রোববার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু হাইকোর্ট গতকাল তাঁর রিট আবেদনও খারিজ করে দেন।
হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না, তা জানতে চাইলে মিন্টুর আইনজীবী ও বিএনপির নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আবেদনকারীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গতকাল রিট আবেদনের ওপর মিন্টুর পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ। তাঁকে শুনানিতে সহায়তা করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাকিব মাহবুব এবং এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
শুনানি শেষে মিন্টুর আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানান, মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে শুনানিতে বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্রের সমর্থক ঢাকা উত্তরের ভোটার নন—স্থানীয় সিটি করপোরেশন আইন ও বিধিমালা অনুসারে এটা গুরুতর ভুল নয়। আইন অনুসারে মনোনয়নপত্রের ছোটখাটো ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের দেবেন। এই তুচ্ছ ভুলটিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা কেন গুরুতর হিসেবে দেখালেন, তার কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদন খারিজের আরজি জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, আবেদনকারী ওই ভুলকে তুচ্ছ হিসেবে দাবি করলেও আইন অনুসারে এটা গুরুতর ভুল। যদি প্রার্থীর নাম বা ঠিকানায় কিংবা বানানে ভুল থাকত, তাহলে সেগুলো তুচ্ছ ভুল হিসেবে বিবেচনা করা যেত।
আপিল শুনানি আজ শেষ হচ্ছে: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন, তাঁদের আপিলের শুনানি অব্যাহত আছে। গতকাল তৃতীয় দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরও ৩৫ জন প্রার্থীর আপিলের শুনানি হয়। এর মধ্যে ১৮ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে রায় দিয়েছে আপিল কর্তৃপক্ষ। সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আপিলের এ শুনানি হচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান শুনানি করে রায় দিচ্ছেন।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালসহ আজ ৫০ জনেরও বেশি প্রার্থীর আপিলের শুনানি হবে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শুনানি।