১৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি আগুন, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি

Slider জাতীয়


বিএম কনটেইনার ডিপোর ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ করছে সেনাবাহিনী
প্রায় ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। উল্টো দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। সেই সারিতে ঠাঁই হচ্ছে একেকটি মরদেহ। একই সঙ্গে নিঃশেষ হচ্ছে বহু পরিবারের স্বপ্ন। চট্টগ্রামের আকাশ-বাতাসে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ। আর চারপাশ ভারি হয়ে উঠেছে দগ্ধ ও নিহতদের স্বজনদের কান্নায়।

সবশেষ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণে ৪২ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন আটজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।

এছাড়া আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের সামনে স্বজনদের অপেক্ষা

সবশেষ রোববার (৫ জুন) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, রোভার স্কাউট এবং রেড ক্রিসেন্টসহ স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনই ২৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল তাদের প্রায় ৫০০ এর মতো স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন।

এ সংঘটনের সদস্য রাকিবুল হাসান বলেন, আমি নিজেই চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এদের বেশিরভাগরই চেনা যায় না চেহারা। আগুনে পুড়ে কয়লার মতো হয়ে গেছে। এক মরদেহের তো বিচ্ছিন্ন দুই হাত ১০-১৫ ফুট দূরে পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে দগ্ধরা

সরেজমিনে দেখা যায়, ডিপোতে আগুন এখনো জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কেমিক্যাল পোড়ার ধোঁয়ায় পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে থাকা যাচ্ছে না বেশিক্ষণ। চোখ জ্বালাপোড়া করছে।

রাত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জাবেদ আহমেদ বলেন, এখনো কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। এখানে প্রধান সমস্যা অক্সিজেন ও ধোঁয়া।

এদিকে ডিপোর গেটের সামনে ভিড় করেছেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা খুঁজে ফিরছেন প্রিয়জনকে। কেউ কেউ আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বজনকে না পেয়ে ডিপোর সামনে এসে অপেক্ষা করছেন। এসময় তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিপোতে প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল। সেখানে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন বলেন, যেহেতু দীর্ঘক্ষণ ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সে কারণে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত ‘হাজমত টিম’ ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে। এই টিম বিদেশে প্রশিক্ষিত এবং তারা আগুনের মধ্যেও কাজ করতে পারে। বর্তমানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট।

তিনি বলেন, এই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। এখানে ক্ষণে ক্ষণে এখনো বিস্ফোরণ হচ্ছে। কেমিক্যালের জন্য আগুন নেভানো যাচ্ছে না। আমি পরিদর্শনকালে ছয়টি বিস্ফোরণ দেখেছি।

ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর ব্যাটালিয়ন-১ এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, কেমিক্যাল যাতে ড্রেনের মাধ্যমে সমুদ্রে না ছড়াতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনীর বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করতে যাচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে কেমিক্যাল সমুদ্রে ছড়াতে পারে। এতে সমুদ্রের পানি এবং মৎস্য ও জলজ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

কনটেইনার অপসারণ করা হচ্ছে
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এসময় এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ভেঙে পড়ে আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *