সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে জানিয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, শিগগিরই আসবে সরকার পতনের কর্মসূচি। আর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রয়োজনে রাজনীতি থেকে বিএনপিকে বিতাড়িত করা হবে। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটেও পড়বে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলছে বিএনপির সংলাপ। এক সপ্তাহের মধ্যে ডান-বাম মিলিয়ে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নেতারা।
শনিবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সব দল নিয়ে ঐক্য গঠনে এগোচ্ছে বিএনপি। শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি তুলে তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে এদেশে কখনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না, তারা অতীতের নির্বাচনগুলোতে প্রমাণ করেছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে এটা স্বীকৃত। অতএব এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, এদেশে যারা এই স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন করে না, এদেশের গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক দল-জোট-ব্যক্তিকে নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করার জন্য আমরা একটা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা খুব আনন্দিত যে অনেক সাড়া পেয়েছি। তার চেয়ে বেশি আনন্দিত যে, জনগণের মধ্যে সাড়া আমরা সবচাইতে বেশি পেয়েছি। কারণ জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ। শুধু একটি রাস্তায় নেমে কার্যকর আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। সেই অপেক্ষায় জনগণ আছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সারা দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ, এই সরকারের প্রতি তারা আস্থা হারিয়েছে। তাই আজকে দেশের জনগণ চায় যত শিগগিরই এই সরকারের পতন।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে দেশ একটা নীরব দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে চলছে। চাল থেকে শুরু করে সকল পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। একদিকে এই মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে আমাদের টাকার মান কমে যাচ্ছে। কীসের জন্য? এই সরকারের দুঃশাসনের জন্য। গায়ের জোরে তারা সরকারে আছে, সিন্ডিকেট করে সরকারে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের আওয়ামী সিন্ডিকেটের হাতে। এই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে এই আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, সরকারবিরোধী যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে। সরকারের অধীনই আগামী নির্বাচন হবে। জনগণ এখন আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তারা দেশের উন্নয়ন চায় না। যারা পদ্মা সেতু মানতে পারে না, সেই বিএনপি-জামায়াতই শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেয়। বিএনপি খুনির ভাষায় কথা বলে। যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার, তখন বিএনপি দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এদের মোকাবিলা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আর দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি। জনগণের রায়কে ভয় করে বলেই বিএনপি আগামী নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা অথবা ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তারা। বিএনপি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সন্ত্রাসী দল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবার সন্ত্রাসের পথে হাঁটলে বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।
সরকারবিরোধী যেকোনো অপচেষ্টা প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জনগণের সজাগ থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ নেতার।