দীর্ঘ ৯২ দিন পর প্রধান ফটকের তালা কেটে নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলেছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন ও শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় আসাদুল করিম শাহীন সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩রা জানুয়ারি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে আটক করে কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ ছিল। গণমাধ্যমে জানতে পেরেছি- কার্যালয় থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাই আজ (শনিবার) গেটের তালা কেটে অফিস খুলেছি। অফিসের অবস্থা খুবই খারাপ। সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি বলেন, আশা করি পুলিশ আমাদের দলের নেতাকর্মীদের কার্যালয়ে আসতে বাধা দেবে না। তালা কাটার প্রসঙ্গে শাহীন বলেন, প্রধান ফটকে পুলিশ যে তালাটি দিয়েছিল সে তালার ডুপ্লিকেট চাবি আমাদের কাছে ছিল। কিন্তু আপনারা দেখেছেন- আধাঘণ্টা চেষ্টা করেও সেই চাবি দিয়ে তালা খোলা যায়নি। মেশিন দিয়ে তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেছি। পুলিশ আমাদের তালাটি পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের তালা দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন শাহীন। উল্লেখ্য, গত ৩রা জানুয়ারি রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে অসুস্থ অবস্থায় নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে আটক করে এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ডিবি পুলিশ। এরপর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন করা হয় এসিপি, জলকামান, রায়ট কার ও পুলিশ ভ্যান। এক প্লাটুন পোশাকধারী পুলিশ কার্যালয়ের সামনে সার্বক্ষণিক পাহারায় ছিল। কার্যালয়ের নিচতলাটিকে রীতিমতো ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল তারা। বিরোধী জোটের আন্দোলন চলাকালীন দলটির কোন নেতাকর্মীকে নয়াপল্টনমুখী হতে দেখা যায়নি। এদিকে ২রা মার্চ দুপুরে হঠাৎ করেই কার্যালয়ের সামনে থেকে পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়। কার্যালয়ের সামনের জলকামান ও পুলিশ ভ্যানও সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর গতকাল বেলা ১২টার দিকে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় কার্যালয়ের কর্মচারী আবদুর রহিম জানান, ২রা জানুয়ারি দুপুরে কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়। এখন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিলেই তালা খুলবো। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে কার্যালয় খুলতে যান আসাদুল করিম শাহীনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। প্রথমে তারা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ফটকের তালা খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু আধা ঘণ্টা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে তালা কাটার মেশিন নিয়ে আসেন। মেশিন দিয়ে তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন। সন্ধ্যায় আসাদুল করীম শাহিনসহ নেতারা যখন কার্যালয়ে প্রবেশ করছিলেন, তখন ওই কার্যালয়ের সামনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্য তাদের বাধা দেয়নি। এদিকে কার্যালয়টি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পাঁচতলা ভবনের সবগুলো কক্ষেই স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ দেখা গেছে। মেঝেতে বিভিন্ন দিনের দৈনিক পত্রিকা ও চিঠি পড়ে থাকতে দেখা যায়। অফিসের প্রতিটি আসবাবপত্র ও মেঝে ধুলো আস্তরণ ছিল। বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কার্যালয়ের তিনতলায় গিয়ে বসেন বিএনপি নেতারা। কার্যালয়ের কর্মচারীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শুরু করেন। কার্যালয় খোলার খবর পেয়ে রাতেই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন সারির নেতারা কার্যালয়ে যান।