দীর্ঘ ৫৭ বছর পর চালু হয়েছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস। বুধবার (১ জুন) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে নীলফামারীর চিলাহাটিতে এসে পৌঁছায় ট্রেনটি।
এরপর ৩৫ মিনিট বিরতি দিয়ে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ১২ জন যাত্রী নিয়ে চিলাহাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে মিতালী এক্সপ্রেস। যাত্রীদের মধ্যে বাংলাদেশি চারজন আর ভারতীয় ৮ জন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৩ মে থেকে ওই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ময়নুল হেসেন বলেন, পাসপোর্ট ভিসা দেখিয়ে ওই টিকিট সরবরাহ করছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সহকারী স্টেশন মাস্টার রুহুল আমিন জানান, ভারত থেকে মিতালী ট্রেনটি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন লোকোমাস্টার (চালক) কৌশিক ঘোষ, সহকারী লোকোমাস্টার রঞ্জন কুমার মিজরা ও বিবেকানন্দ চৌধুরী।
এদিকে বাংলাদেশি ইঞ্জিনে ভারতীয় কোচ যুক্ত করে চিলাহাটি থেকে লোকোমাস্টার (চালক) শরিফুল ইসলাম, সহকারী লোকোমাস্টার শাহাজান আলী, গার্ড সহিদুল ইসলাম ও সহকারী গার্ড হাসান ইমাম ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সপ্তাহে দুদিন রোববার ও বুধবার এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার চলাচল করবে। আজকের পর থেকে জলপাইগুড়ি থেকে নিয়মিতভাবে ছাড়বে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাবে ১০টা ৩০ মিনিটে। আবার ঢাকা থেকে ছাড়বে ৯টা ৫০ মিনিটে ও পরের দিন ভারতে পৌঁছাবে সকাল ৭টা ৫মিনিটে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার জানান, মিতালী এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে চলাচল করবে। ভ্রমণকারী যাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এসি বাথ-৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি সিট-৩ হাজার ৮০৫ টাকা, এসি চেয়ার-২ হাজার ৭৫ টাকা।
পাঁচ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকা। ট্রেনটি ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট উদ্দেশে যাত্রাপথে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনে ৩৫ মিনিট যাত্রা বিরতি (অবস্থান) করবে।
ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের গোসাইগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া রহমান (৫৫) বলেন, পাকিস্তান আমলে (১৯৬৫ সাল) কয়লা পরিবহনসহ চেকপোস্ট কাস্টমস অফিস দেখেছি। রেলপথটি বন্ধ থাকলেও ইমিগ্রেশন কাস্টমস অফিস কর্মকাণ্ড চালু ছিল পাসপোর্টধারীদের জন্য। দীর্ঘ ৫৭ বছর পর পুনরায় বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃদেশীয় ইমিগ্রেশন কাস্টমস অফিসের কার্যক্রম চালুর দাবি জানান তিনি।
একই উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের দিগন্ত পাড়া গ্রামের কৃষক আয়নুল ইসলাম (৭৫) বলেন, ১৯৬৫ সালে আমার বয়স ছিল ১০-১২ বছর। তখন দেখেছি যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালামাল পরিবহন করা হতো এই রুটে। এখানে এখনো নিদর্শন হিসেবে সেই পাসপোর্ট অফিস ও চেকপোস্ট অফিস পড়ে আছে। দীর্ঘদিন পর ফের দু’দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার নেই কোনো ব্যবস্থা। আমাদের প্রাণের দাবি, দ্রুত পাসপোর্ট ভিসাসহ সকল কার্যক্রম চালু করা হোক।
গত ২৭ মার্চ আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেসটি চলাচলের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও ভারতের কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এই রেলপথে ট্রেনটি উদ্বোধন করা হলেও কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে চলাচল বন্ধ থাকে। এই রেলপথটির দূরত্ব ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কিলোমিটার রয়েছে।
বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি রেলপথে ১৯৬৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দার্জিলিং মেইল ট্রেন চলাচল করেছিল। এরপর পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রায় ৫৭ বছর পর এই রেলপথে পুনরায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু করল দু’দেশের রেল কর্তৃপক্ষ।